পাতা:বহুবিবাহ রহিত হওয়া উচিত কি না এতদ্বিষয়ক বিচার - দ্বিতীয় পুস্তক.pdf/১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বহুবিবাহ।
১১

কোনও শব্দের অর্থ গোপিত বা অযথা প্রতিপাদিত হইয়াছে, ইহা কেহই প্রতিপন্ন করিতে পারিবেন না। ফলতঃ, এই ব্যাখ্যা যে এই বচনের প্রকৃত ব্যাখ্যা, সংস্কৃতভাষায় ব্যুৎপন্ন অথবা ধর্ম্মশাস্ত্রব্যবসায়ী কোনও ব্যক্তি তাহার অপলাপ বা তদ্বিষয়ে বিতণ্ডা করিতে পারেন, এরূপ বোধ হয় না।

 এক্ষণে, আমার লিখিত অর্থ প্রাচীন ও চিরপ্রচলিত অর্থ, অথবা লোকবিমোহনার্থে বুদ্ধিবলে উদ্ভাবিত অভিনব অর্থ, এ বিষয়ে সংশয় নিরসনের নিমিত্ত, বেদব্যাখ্যাতা মাধবাচার্য্যের লিখিত অর্থ উদ্ধৃত হইতেছে;—

 “অগ্রে স্নাতকস্য প্রথমবিবাহে দারকর্ম্মণি অগ্নিহোত্রাদৌ ধর্ম্মে সবর্ণা বরেণ সমানো বর্ণো ব্রাহ্মণাদির্যস্যাঃ স যথা ব্রাহ্মণস্য ব্রাহ্মণী ক্ষত্রিয়স্য ক্ষত্রিয়া বৈশস্য বৈশ্যা প্রশস্তা। ধর্ম্মার্থমাদৌ সবর্ণামূঢ়া পশ্চাৎ রিরংসবশ্চেৎ তদা তেষাম্ অবরাঃ হীনবর্ণাঃ ইমাঃ ক্ষত্রিয়াদ্যাঃ ক্রমেণ ভার্য্যাঃ স্যুঃ[১]।”

 অগ্নিহোত্রাদি ধর্ম্ম সম্পাদনের নিমিত্ত, জাতকের প্রথম বিবাহে সবর্ণা অর্থাৎ বরের সজাতীয়া কন্যা প্রশস্তা, যেমন ব্রাহ্মণের ব্রাহ্মণী, ক্ষত্রিয়ের ক্ষত্রিয়া, বৈশ্যের বৈশ্যা। দ্বিজাতিরা ধর্ম্মকার্য্য সম্পাদনের নিমিত্ত, অগ্রে সবর্ণাবিবাহ করিয়া, পশ্চাৎ যদি রিরংসু হয় অর্থাৎ, রতিকামনা পূর্ণ করতে চাহে, তবে অবরা অর্থাৎ হীনবর্ণা বক্ষ্যমাণা ক্ষত্রিয়া, বৈশ্যা ও শূদ্রা অনুলোমক্রমে তাহাদের ভার্য্যা হইবেক।

দেখ, মাধবাচার্য্য মনুবচনের যে অর্থ লিখিয়াছেন, আমার লিখিত অর্থ তাহার ছায়াস্বরূপ। সুতরাং, আমার লিখিত অর্থ লোকবিমোহনার্থ বুদ্ধিবলে উদ্ভাবিত অভিনব অর্থ বলিয়া উল্লিখিত হইতে পারে না। এক্ষণে সকল বিবেচনা করিয়া দেখুন, “বিদ্যাসাগরের কি চাতুরী! অকিঞ্চিৎকর অভিনব অর্থের উদ্ভাবন


  1. পরাশরভাষ্য। দ্বিতীয় অধ্যায়।