পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/১০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

סיף বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড l ○br l মোঃ আবুল ওয়াহেদ গ্রাম-সুলতানাবাদ (বেলদার পাড়া) ২৫শে মার্চের পরে রাজশাহী শহরকে পাক বাহিনী তাদের আয়ত্তে আনে। বাংলাদেশের স্বপক্ষের বিশেষ করে আওয়ামী লীগের কর্মী বৃন্দকে খুঁজতে থাকে এবং ধরে নির্দয়ভাবে হত্যা করে। এপ্রিলের প্রথম দিকে বেলদার পাড়ার দুজন যুবক যথাক্রমে বাদল ও অন্যজনকে প্রকাশের দিবালোকে রাস্তার উপরে গুলি করে হত্যা করে। বর্বর সৈন্যদের এলোপাতাড়ি গোলাগুলির আওয়াজে গ্রামবাসী প্রাণের ভয়ে বাড়ী ঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। আমি এপ্রিল মাসের ১২ তারিখে মা সহ ভারতে আশ্রয় নেই। এবং জুন মাসে ১লা তারিখে স্ত্রী এবং ছেলে মেয়েদেরকে নেবার জন্য বেলদার পাড়ায় আসি। ৩ দিন পরে পাক বাহিনী রাত ৯টার সময় বাড়ী ঘেরাও করে আমাকে গ্রেফতার করে। অবশ্য শান্তি কমিটির দালালদের কুপ্ররোচনায়। গ্রেফতার করার সময় বাড়ীর চারিদিকে এবং ছাদের ওপর থেকে গোলাগুলি করে এক বিভীষিকাময় পরিবেশের সৃষ্টি করে। গ্রেফতার করার পর অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। পরে গুলি করার জন্য আমাকে লাইনে দাঁড় করায়। কয়েকজন সৈন্যের উদারতার জন্য গুলি করতে বিরত হয় কিন্তু শারীরিক নির্যাতন চালায়। অতঃপর আমাকে জিপে করে হাত বাঁধা অবস্থায় স্থানীয় সার্কিট হাউজে নিয়ে যায়। সেখানে অন্ধকারময় বন্ধ ঘরে পিছনে হাত বাঁধা অবস্থায় দেয়লের দিকে মুখ করিয়ে সারারাত দাঁড় করিয়ে রাখে। এবং যাতে বসতে না পারি তার জন্য সামরিক বাহিনীর লোকেরা কড়া পাহারা দিতে থাকে। সকালের দিকে এক কাপ চা ও একখান রুটি খেতে দেয়। ঐ সার্কিট হাউজেই বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন ছাত্রকে বন্দী অবস্থায় দেখতে পাই। তাদের উপরে বর্ণনাতীত শারীরিক নির্যাতন চালায়। নির্যাতনের এক পর্যায়ে জনৈক পদস্থ কর্মচারী ছাত্রদ্বয়কে চাকু লাগাতে নির্দেশ দেয়। কিন্তু কিমাকার বিশাল বপু বিশিষ্ট একজন সৈন্য অফিসারের নির্দেশের মর্মানুযায়ী তাদের পেটে কুকুরের মতো কামড়িয়ে ংস ধরে টানাটানি করতে থাকে। ছাত্রদ্বয় আর্তচিৎকার করতে থাকে। তিনজনই পূর্ব পরিচিত হলেও কেউ কাউকে পরিচয় দেবো না বলে একমত হই। পরের দিন আমিসহ দুজন ছাত্রকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাফ কোয়ার্টার ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। নিয়ে যাবার পর ক্যাম্পের খোলা আঙ্গিনায় আমাদের গায়ের জামা খোলার নির্দেশ দেওয়া হয়। জামা খোলা হলে ১০/১২ জন বর্বর সৈন্য বেত, চাবুক দ্বারা এলোপাতাড়িভাবে প্রহার শুরু করে। রক্তাক্ত অবস্থায় যতক্ষণ না তারা অজ্ঞান হয় ততক্ষণ ঐ অবস্থা চালাতে থাকে। অতঃপর পা ধরে টেনে পার্শ্বের একটি ছোট কোঠায় পাশাপাশি রেখে দেয়। কিছুক্ষণ পর ছাত্রদের মধ্যের একজনকে যিনি বেশ স্বাস্থ্যবান ছিলেন তাকে পুনরায় টেনে আঙ্গিনায় নিয়ে যায় এবং পায়ে দড়ি বেঁধে উল্টোভাবে রডের সাথে টাঙ্গিয়ে দেয়। ‘তুমলোক লিডার হ্যায়’ বলে চাবুক দিয়ে মারতে শুরু করে। তার শরীর দিয়ে দর বিগলিত ধারায় রক্ত গড়াতে থাকে। অত্যাচারের এক পর্যায়ে হঠাৎ ছেলেটির পায়ের দড়ি ছিড়ে পড়ে যায়। তখন তারা সাময়িকভাবে অত্যাচার বন্ধ করে দেয়। অজ্ঞান অবস্থাতেই পূর্বোক্ত ঘরে পূর্বোক্ত পদ্ধতিতে রেখে দেয়া হয়। সারাদিন ও রাত অভুক্ত অবস্থায় রেখে দেয়া হয়। পরদিন সকালে শুধু এক কাপ চা পান করতে দেয়। তারপর এক এক করে পাশের ঘরে সিকিউরিটি অফিসার সেলিমের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি প্রথমবারের মতো বিবৃতি নিলেন। বিবৃতি নেবার মাঝে মাঝে অফিসারটি নিজেই হাতে গ্লোভস পরে এলোপাতাড়ি ঘুষি