পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/১০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

brՏ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড প্রক্রিয়ায় পালাক্রমে সারা রাত ধরে অত্যাচার চলে। শেষ রাতের দিকে সেই পশুরা যখন অণ্ডকোষ ও বাহ্যদ্বারে লাঠি মারে সে সময় আমি চিৎকার করে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। সকাল ৭/৮ টার দিকে যখন আমার জ্ঞান ফিরে তখন আমি ঐ বসা অবস্থায় কুণ্ডলী পাকিয়ে নিজকে পড়ে থাকতে দেখতে পাই। এবং ঐ অবস্থায় অভুক্তভাবে সারাদিন ঐখানেই পড়ে থাকি। বিকেল বেলা আমার হাত এবং পায়ের বাঁধন খুলে দেয়। চোখ বাধা অবস্থাতেই গাড়িতে তুলে নিয়ে সন্ধ্যার পর চোখ ও হাত পা খোলা অবস্থায় কর্নেল রেজভীর সামনে আবার পূর্বোক্ত প্রশ্নগুলি জিজ্ঞাসা করতে থাকে। আমি সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করি। রাত ১১টার দিকে আমাকে একটি ঘরে বন্দী করে। সেখানে আমি ১০/১২ জন লোককে বন্দী অবস্থায় দেখতে পাই। পরদিন সকালে কয়েকজন সেপাই আমাকে দেখে প্রহার শুরু করে। পালাক্রমে তারা এই কাজ করে। তাদের রীতি ছিল যে ঐ ঘরে কোনো লোক গেলে তারা বলতো “তোম কাঁহাসে আয়া, কব আয়া ?” আর তার সাথে প্রহার করতো। দুপুরের দিকে ২টা রুটি এবং কিছু তরকারি দেয়। পায়খানা প্রসাব অথবা গোসলদির কোন ব্যবস্থা ছিল না। সেখানে তের দিন বন্দী অবস্থায় ছিলাম। এবং সে সময় আমি লক্ষ্য করেছি যে সারা দিন ধরে লোক জমা হতো এবং রাতে অস্ত্রশস্ত্র সহকারে একজন হাবিলদার এবং তিনজন সেপাই আসতো। তাদের সাথে মোটা দড়ি থাকতো। কাগজে নাম লিখা থাকতো। নাম ধরে ডাকত এবং বলতো “তোম খাড়া হো যাও।” খাড়া হয়ে গেলে পিছনে ঐ দড়ি দিয়ে কষে হাত বাঁধতো এবং টেনে মাঠের মধ্যে ১০০/১৫০ গজ দূরে নিয়ে যেত। তারপর শোনা যেত গুলির আওয়াজ। যতগুলি লোক ধরে নিয়ে যেত ঠিক ততটি গুলি করতো। প্রত্যেক রাতে ৭/৮/৯/১০টা করে লোক এমনি করে হত্যা করেছে। এ সময় প্রত্যেকদিন আমার উপর অমানুষিক অত্যাচার করেছে। ১৩ দিন পর বিকেলে নাকে লোহার পাত দিয়ে পিছনে হাত বেঁধে (ডবল হ্যাণ্ডকাফ দিয়ে) জাহাঙ্গীর পরিবহনে (রাজশাহীর একটি বাসের নাম যা এখনো আছে) করে নাটোর এম, পি, এইচ, কিউ ফুল বাগানে পাঠায়। বাসের দরজা জানালা বন্ধ অবস্থায় ছয়জনের গার্ডে নাটোর পোছাই। সেখানে প্রায় আধ ঘন্টা ছিলাম। সে সময়ই এমপিরা পালাক্রমে প্রহার করে এবং অকথ্য ও অশ্লীল ভাষায় গালি গালাজ করে । তারপর নাটোর জেলখানায় পাঠিয়ে দেয়। জেলখানায় হাত খোলা অবস্থায় হাজত ঘরে বন্দী করে রাখে। সেখানে আরও ৫০/৬০ জন লোক ছিল। ৫/৭ দিন আমি সেখানে ছিলাম। সেখানে একজন এফআইটি প্রত্যহ আসত এবং পালাক্রমে সকলের জবানবন্দী নিত। জবানবন্দী নেবার আগে এক পশলা প্রহার করে নিতো। সকাল বিকেল ও দুপুরে এই কাজ করতো। জবানবন্দী হয়ে গেলে ঐ সময় আমাকে জেল ঘরে পাঠায়। সেখানে আমরা ৬২ জনের মতো লোক ছিলাম। জেলখানায় থাকার সময় আমাকে একদিন বের করে মেজের উপর হাঁটুর মধ্যে দিয়ে মাথা ঢুকিয়ে কান ধরে রাখতে বলে এবং ঐ অবস্থায় ৫০/৬০টি বেত মারে। আমি পড়ে গেলে আমাকে আবার তুলে উপুড় করে শুইয়ে দেয়। এছাড়া কখনো হাত-পা ফাঁক করে দাঁড় করিয়ে রাখতো। কখনো বা টান উপর করে বুকডন দেওয়ার প্রক্রিয়ায় ঘন্টা খানেক করে রাখতো। তাছাড়াও উপুড় করে শুইয়ে রেখে দুজন সিপাই একই সঙ্গে পিঠের উপর খুঁচত। বেত পিটানো তো নিয়মিতই হচ্ছিল। প্রত্যেক দিন বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় ১৬২ জন ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার,