br8 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড |l 8xყy ll মোঃ আনিসুর রহমান থানা-বাগমারা ১৯৭১ সালের এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে শান্তি কমিটির সদস্যরা গাঙ্গোপাড়া হিন্দু বর্ধিষ্ণু গ্রামে লুটপাট করে। সমস্ত কাপড়-চোপড়, সোনাদানা, থালাবাসন লুটপাট করে। এমন কি ঘরের মেঝে, পুকুর ঘাটের সিড়ি কোদালী, পাশ দিয়ে ভেঙ্গে ফেলে। তাদের ধারণা সেখানে তাদের লুকানো সম্পদ আছে। ঘরের জানালা কপাট খুলে নিয়ে যায়। ধানচাল, গরুবাছুর ইচ্ছামত নিয়ে নেয়। তাদের অনেকে বাস্তুভিটা ত্যাগ করার তাদের সে সুযোগটুকুও দেয়নি। এমন কি অনেকে যখন ভাত থালে বেড়ে নিয়ে খেতে বসেছিল ঠিক সে সময় হারাম, শীঘ্ৰ পালা, প্রাণে মারলাম না, সেটা শুধু আমাদের দয়া।” অনুরূপভাবে জিনিসপত্র গরুবাছুরের তালিকা করে হিন্দুদের উচ্ছেদ করা হয় সেন পাড়া, ভবানীগঞ্জ, খাজাপাড়াসহ থানার সমস্ত হিন্দু এলাকা থেকে। ২৩শে এপ্রিল, ৯ই বৈশাখ বিকাল চারটার দিকে শান্তি কমিটির আমন্ত্রণে পাক সৈন্যরা তাহিরপুরে আসে। ঐ দিন ছিল তাহিরপুরের হাটবার। সৈন্যরা হাটে এসে সমগ্র হাটে বিক্ষিপ্তভাবে পজিশন নেয় এবং ১৩ জন লোককে ধরে গুলি করে হত্যা করে। এদের অধিকাংশই হিন্দু ছিল। মিলিটারীরা দাঁড়িয়ে থেকে হাট লুট করার নির্দেশ দেয়। কেউ অস্বীকার করলে বেদম প্রহার করে। ফলে হাট যথেচ্ছভাবে লুট হয়। যে সকল হিন্দু দেশের মায়া ত্যাগ করতে না পেরে তখনো ছিল তাদের জোরপূর্বক মুসলমান করা হয়। মুসলমান হবার সময় দেওয়া হয় মাত্র ৪৮ ঘন্টা। এতে নিরূপায় হিন্দুরা গত্যন্তর না দেখে মুসলমান হয়। একদিনেই ৩০০/৩৫০ জন হিন্দু সপরিবারে মুসলমান হয়। একমাত্র গোয়ালকান্দি ও উর্দুপাড়া গ্রামেই ১৩০ জন হিন্দু মুসলমান হয়। ধর্মান্তরিত করার পরেও তাদের মনের ঝাল মিটেনি। হিন্দুদেরই চালডাল, গরু, ছাগল জবাই করে গোয়ালকান্দির মাদ্রাসা মাঠে ঘটা করে মজলিশ করে। উদ্দেশ্য ছিল, হিন্দুদের গোমাংশ ভক্ষণ করিয়ে চিরতরে ধর্মচ্যুত করা। মে মাসে সেনপাড়া গ্রাম থেকে বাঙ্গাল পাড়ার ইয়াছিন আলীকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। ইয়াছিন আলী সেনপাড়ায় তার শ্বশুরবাড়িতে আত্মগোপন করেছিলেন। তারপর তার আর কোনো খবর পাওয়া যায়নি। সেই এই থানার প্রথম শহীদ ব্যক্তি। বাংলা মাস আষাঢ় মাস ছিল। শান্তিকমিটি গঠিত হবার পর পরই শান্তিকমিটির লোকেরা দৃস্কৃতকারীর তালিকা তৈরি করে। এতে আওয়ামী লীগের নেতা ও প্রথম শ্রেণীর একনিষ্ঠ কর্মীদের নামের তালিকা তৈরী করে। তাতে জনাব সরদার আমজাদ হোসেন এমপি, বাজে গোয়াল কান্দি গ্রামের আনিসুর রহমান, খামার গ্রামের কাজী সাজেদুর রহমান, থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল ইসলামসহ প্রায় ২২/২৩ জনের তালিকা তৈরী করা হয়। সরদার আমজাদ হোসেন সাহেবকে জীবন্ত অথবা মৃত ধরিয়ে দিতে পারলে ১৫ হাজার টাকা পুরষ্কার ঘোষণা করা হয়। এছাড়া আনিসুর রহমানসহ আরও কতিপয়কে ধরিয়ে দিতে পারলে ৫ হাজার টাকা পুরষ্কার ঘোষণা করা হয়।
পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/১১১
অবয়ব