পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/১২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ఫి( বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড ll (* ? || ডি, এম, তালেবান নবী প্রতিনিধি, দৈনিক বাংলা’ চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী ৩রা আগষ্ট রাত্রি প্রায় ১১টায় পাঞ্জাবী পুলিশ স্থানীয় রাজাকার বাহিনীর প্রধান, শান্তি কমিটির সদস্য, ও ভি ডি পার্টির সভাপতিসহ আমার বাড়ি ঘেরাও করে এবং প্রবেশ করে আমাকে গ্রেফতার করে। অবশ্য গ্রেফতারের পূর্বে সমস্ত বাড়ি তছনছ করে। গ্রেফতার করে সামরিক ক্যাম্পে নিয়ে যায়। নিয়ে যাবার পর মুক্তিবাহিনীর সাথে যোগাযোগকারী ওয়্যারলেস ও রিভলবার কোথায় রয়েছে তা জানাতে বলে। সদুত্তর না পেলে আমাকে পা ফাঁক করে বাঁশ দেয়। অতঃপর চাবুক দ্বারা বেদম প্রহার শুরু করে। প্রায় ঘন্টা তিনেক একের পর এক হাত বদল করে এমি অত্যাচার চালায়। এর মধ্যে বেশ কয়েকবার আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছি। এরপর গভীর রাতে ঐ অবস্থাতেই উঠাবসা করতে নির্দেশ দেয়। হয়তো একশো বার ঐ প্রক্রিয়া চালাতে বললে ৪০ বার করার পর বলে যে পাঁচবার হয়েছে। কিছু সময় এ অবস্থা চালিয়ে অসমর্থ হয়ে মাটিতে পড়ে গেলে আমাকে লাথি মেরে উচু বারান্দা থেকে নিচে ফেলে দেয়। সেখান থেকে আবার তুলে নিয়ে আসে এবং আবার উঠাবসা করায়। আবার পড়ে গেলে আবার লাথি মেরে ফেলে দেয় ও তুলে আনে। এন্নি করে সকাল হয়ে গেলে ক্যাম্পের ভিতরে প্রধান রাস্তায় হাত-পা বেঁধে ফেলে রাখে। সেখান দিয়ে যে সমস্ত সামরিক লোক চলাচল করেছে তারা সকলে আমাকে যথেচ্ছভাবে লাথি মেরে পায়ের ঝাল মিটিয়ে নেয়। সারাদিন আমি ঐ অবস্থায় ছিলাম এবং খোলা জায়গায় রোদে সমানভাবে অত্যাচারিত হয়েছি। সন্ধ্যার দিকে ঐখানেই জিজ্ঞাসা করে যেম তুমি মুসলমান না হিন্দু। মুসলমান বললে আমাকে কলেমা বলতে বলে। আমি ইচ্ছাকৃতভাবে কলেমা বলা থেকে বিরত থাকি। তখন আমাকে জিজ্ঞাসা করা হয় যে, এখানের কলেজে কলেমা পড়া হয় কি না। উত্তরে না বললে আমাকে কাপড় খুলতে নির্দেশ দেয় এবং উলঙ্গ করে। উলঙ্গ অবস্থাতেই আমাকে ঘন্টা দুই রাখা হয়। অতঃপর পূর্ব পদ্ধতিতে আবার ওঠাবসা করতে বলে। কিন্তু বসতে পারলেও কিছুতেই উঠতেই পারছিলাম না। কারণ খুব নিস্তেজ হয়ে গেছি। সে অবস্থাতেও আমাকে মারধর করা হয়। তারপর আমাকে টাঙ্গানোর নির্দেশ দেয়। তখন দু’পা উপরের দিকে বেঁধে টাঙ্গিয়ে দেয়। হাত যেনো কোন বাধার সৃষ্টি না করে সে জন্য হাত দুটিও বেধে দেওয়া হয়। এরপর একজন সিপাইকে ডেকে চাবুক মারতে নির্দেশ দেয় এবং সেরূপ চলতে থাকে। একজন ক্লান্ত হলে আর একজন চাবুক মারত। এন্নি করে তিনজন চাবুক মারার পর আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। অত্যাচারের এক পর্যায়ে পানি পান করতে চাইলে মুখে সজোরে লাথি মারে। আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। রাতের কোন এক সময় জ্ঞান ফিরে পাই। পুনরায় পানি পান করতে চাইলে পাহারারত দুইজন সিপাহীর একজন প্যান্টের বোতাম খুলে। এবং মুখে প্রস্রাব করে দেয়। প্রস্রাব করে দিয়ে সিপাইটি তার নিজের আসনে ফিরে যায়। পরের দিন সকাল পর্যন্ত ঐ টাঙ্গানো অবস্থাতেই থাকি। এর মধ্যে মাঝে মাঝে সামান্য জ্ঞান ফিরে আসে এবং পর মুহুর্তেই আবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। সকালের দিকে আমাকে নামানো হলে বলে যে তুমি লিখে দাও যে, রিভলবার ও ওয়্যারলেস কোথায় আছে, তাহলে তোমাকে ছেড়ে দেয়া হবে। নেতিবাচক উত্তর দিলে তারা আমাকে চড়-থাপ্পড় দেয়। তারপর আমাকে এক ঘরে বন্দী করে রাখা হয়। সেদিন দিবাগত রাতে একজন মাষ্টারসহ তিনজন মুক্তিফৌজকে ধরে নিয়ে আসে। রাতে জিজ্ঞাসা করলে তারা (মুক্তিযোদ্ধারা) স্বীকার করেনি বলে আমি জানাই। সারা রাত তারা আমার কাছেই থাকেন। পরের দিন রাত ১২টার দিকে সেলে ঢুকে কাপড় ও পায়ের জুতা