পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/১২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bど বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড মুক্তিযোদ্ধাদের খুলতে বলে এবং খুলে লুঙ্গি পরা অবস্থায় বাইরে ক্যাম্পের পিছনে নিয়ে যায়। এর কিছুক্ষণ পরে বিকট আ... চিৎকার ভেসে আসলো। এতে অনুমান করা গেল যে, বেয়নেট অথবা ছোরা দিয়ে গুতিয়ে তাদের হত্যা করা হয়েছে। এভাবে পাঁচ দিন প্রায় অভুক্ত অবস্থায় থাকার পর ৭ই আগষ্ট দিবাগত রাত ৯টার সময় আমাকে শর্তসাপেক্ষে ছেড়ে দেয়। শহরের বাইরে কোথায়ও যেতে পারব না এটাই ছিল তাদের প্রধান নির্দেশ। ২৩শে এপ্রিল শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে গোমস্তাপুরে পাক মিলিটারীরা অপারেশন করে। থানার পার্শ্বের বাজারপাড়া হিন্দু বস্তিতে গিয়ে ৩১ জন পুরুষকে ধরে নিয়ে আসে। অতঃপর সমস্ত গ্রাম পেট্রোল দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। ধরে আনা লোকদের থানার পিছন দিকে মহানন্দা নদীর তীরে ১৫ জনে প্রথম দলকে দাঁড় করায় এবং গুলি করে হত্যা করে। অপর দলের ১৬ জনকেও ঐ একইভাবে হত্যা করে। হত্যা করার পর লাশগুলিকে পেট্রোল দিয়ে জ্বালাবার নির্দেশ দিলে মৃত ৩১ জনের মধ্য থেকে অমিল কর্মকার নামে এক ব্যক্তি পুড়িয়ে দেয়ার ভয়ে লাফিয়ে ওঠে। তৎক্ষণাৎ তাকে গুলি করে হত্যা করে। ১৯শে অক্টোবর রবিবার দিবাগত রাত্র প্রায় তিনটার দিকে পাঞ্জাব বাহিনীর দুটি ব্যাটেলিয়ান সীমান্তবর্তী গ্রাম বোয়ালিয়া ঘেরাও করে। মেজর ইউনুসের নেতৃত্বে ব্যাটালিয়ান দুটি সকাল হওয়ার অল্প কিছু আগে মোহসীন মুন্সী আজান দেয়ার জন্য মিনারে উঠেছেন এবং আল্লাহু আকবর উচ্চারণ করেছেন ঠিক তখনই তাকে লক্ষ্য করে প্রথম গুলি চালায়। সাথে সাথে গ্রামের উপর বৃষ্টির মত গুলিবর্ষিত হতে থাকে। এ গ্রামে তিন ঘন্টার প্রায় ৬৫০ জনকে হত্যা করে। এদের মধ্যে শিশু, বৃদ্ধ, যুবক ও নারীও ছিল। ১৬৮০টি বাড়ি সম্পূর্ণ ধূলিসাৎ করে। এরপর বোয়ালিয়া গ্রামসংলগ্ন নরশিরা, শাহপুরা, পলাশবোনা, দরবারপুর, কালোপুর ও ঘাটনগর বঙ্গেশ্বর গ্রামেও হামলা চালায়। এখানেও ১২০০ লোককে হত্যা করে। এ সমস্ত গ্রামও পুড়িয়ে দেয়। পাক বাহিনী হামলা সময় অসংখ্য মহিলার উপর বলাৎকার ও লুটপাট করে। পরবর্তীকালে নরপশুরা উপরোক্ত হত্যা চালায়। এরপরে বিধ্বস্ত এ গ্রামগুলি পাঞ্জাব বাহিনী ও তার তাঁবেদাররা সংলগ্ন থানার নিরীহ জনসাধারণকে ধরে নিয়ে এসে হত্যামঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করে। দেশ স্বাধীন হবার পর দেখা যায় যে, সমস্ত গ্রামগুলিই বধ্যভূমিতে পরিণত হয়েছে। প্রতিটি কুয়া নরকঙ্কালে ভর্তি। অপর দিকে গ্রামগুলিতে যে সমস্ত দেওয়াল ঘর ছিল, সেসব ঘরে জনসাধারণকে হত্যা করে দেওয়াল ভেঙ্গে ঢেকে দেওয়া হয়েছিল। এসব গ্রামগুলির এমন বাড়ি খুঁজে পাওয়া যাবে না কাউকে না কাউকে সে বাড়ি থেকে হত্যা করা হয়নি। এমনও অনেক বাড়ি রয়েছে, যে বাড়ির সকলকেই পাক জল্লাদরা হত্যা করে। এমনি একটি পরিবার সেকান্দার আলী। অপর একটি পরিবার সোলেমান মিয়ার যেখানে শুধুমাত্র ছোট ছেলে বেঁচে রয়েছে। মা-বাবা, ভাইবোন সকলকে হত্যা করা হয়েছে। স্বাক্ষর/ডি, এম তালেবান নবী প্রতিনিধি, দৈনিক বাংলা’ চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী