পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/১৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

〉の8 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড | Wაფ | বাদশা মিয়া মালতী নগর সদর থানা, বগুড়া পাক বাহিনী চারদিক থেকে অসংখ্য গোলাগুলি বর্ষণ করতে শহরের মধ্যে প্রবেশ করে। শহরের মধ্যে প্রবেশ করেই অগণিত লোকজন হত্যা করে। অসংখ্য দোকান পাট লুট করে। বগুড়া শহরের মালতীনগর ও চক লোকমান গ্রামে অসংখ্য বাড়ীঘরে অগ্নি সংযোগ করে ভস্মীভূত করে দেয়। আমি আড়াল থেকে সবকিছু স্বচক্ষে দেখেছি। কাফিউ উঠিয়ে দেবার পর জন সাধারণ যখন শহরের মধ্যে এসেছিল পাক সেনারা সেই সময় মেশিনগানের গুলিতে ৩/৪ শত লোক হত্যা করে। আমিও শহরে এসেছিলাম ঐ দৃশ্য দেখে অভিভূত হয়ে পড়ি। কোন রকমে জীবন নিয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হই। ১৯৭১ সালের ৩১ শে অক্টোবর রোজ রবিবার বেলা ১১ টার সময় ১৩ জন খান সেনা ও ৫ জন রাজাকার এসে আমাদের বাড়ী ঘেরাও করে আমাকে ধরে নিয়ে যায়। ধরার সময় আমার বাড়ী থেকে হাতঘড়ি ও আমার স্ত্রীর ঝুমকা ও গলার মালা রাজাকারেরা লুট করে নিয়ে যায়। ইহাতে অনুমান করি যে, খান সেনারা আমার তিন হাজার টাকার মত সোনার গহনা ও কাসার থালাবাটি লুট করে নিয়ে যায়। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে পাক সেনা শহরে প্রবেশ করেই অবাঙ্গালীদের ৭২ ঘন্টা সময় দিয়েছিল। বাঙ্গালীদের ধন সম্পদ লুটতরাজ করার জন্য। প্রথমে আমাকে স্থানীয় সার্কিট হাউজে নিয়ে আসে। খান সেনার ব্রিগেডিয়ার আমাকে উর্দুতে জিজ্ঞাসা করে যে, ব্যাঙ্ক লুট করেছে কারা, মুক্তি ফেওজ কোথায়, আওয়ামী লীগের লিডার কে কে ইত্যাদি বিষয়। আমি খুব ভাল উর্দু জানতাম। হাউজ থেকে আমাকে জেল খানায় পাঠায়। জেল খানায় আমি অমানুষিক অত্যাচার সহ্য করি। সিগারেটের আগুন, লোহার রড, রাইফেলের বাঁট, বুট জুতার লাথি ইত্যাদির সাহায্যে খান পিশাচেরা নির্মম নির্যাতন চালায় আমার দেহের উপর। জুলন্ত সিগারেটের আগুনের চিহ্ন এখনও শরীরে বিদ্যমান। এইভাবে আমি ১৩ দিন জেল খানায় বন্দী ছিলাম। অনুমিত হয় যে, এক মাত্র ভাল উর্দু জানায় এবং দৃঢ় মনোবলের জন্য খান সেনারা আমাকে হত্যা করেনি। স্বাক্ষর/মোঃ বাদশা মিয়া