পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/১৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

)○br বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড ll E8 || জেলা -বগুড়া আগষ্টের ১৯ তারিখে সারিয়াকান্দি থেকে খান সেনারা দ্বিতীয় বার চন্দনবাইশা চলে আসে। গ্রামের জনসাধারণ একত্রে ডেকে হিন্দুর জমির লোভ দেখিয়ে এবং টাকা পয়সার লোভ দেখিয়ে রাজাকারে আসার নির্দেশ দেয়। তাছাড়া মুক্তিযোদ্ধারা কোথায় আছে এবং কে কে ইত্যাদি খোঁজখবর জানতে চায়। এরপর খান সেনারা রাজাকারে জোর করে লোক নেবার জন্য ২১ তারিখ মঙ্গলবার দিন ধাৰ্য্য করে আসে। অতঃপর সারিয়াকান্দিতে চলে আসে। আসার পর খান সেনারা বগুড়া থেকে বহুসংখ্যক রাজাকার ও খান সেনা সারিয়া কান্দিতে সংবাদ দিয়ে নেয়ে আসে। ২১ তারিখ মঙ্গলবার ১১টার সময় প্রায় ২শত জন খান সেনা ও ৭৫ জন রাজাকার চন্দনবাইশায় চলে আসে। স্থানীয় প্রাইমারী স্কুলে ঘাঁটি করে এবং প্রয়োজনীয় বাঙ্কার তৈরী করে উক্ত স্থানে ঘাঁটি করে। খান সেনারা রাত্রিযোগে জনগণের বাড়ী থেকে হাঁস, মুরগী, গরু, খাসী ইত্যাদি নিয়ে যায়। অযথা যে কোন লোকজনকে ধরে ভীষণ নির্যাতন করত। গ্রামে ঢুকে মেয়েদের উপর পাশবিক অত্যাচার চালায়। একদিন উক্ত গ্রামে জনৈক ব্যক্তির স্ত্রীকে খান সেনারা জোর করে ধরতে যায়। ঐ সময় স্বামী তার স্ত্রীর উপর অত্যাচারের ভাব দেখে সহ্য করতে না পেরে তাকে আঘাত করে। খানসেনা তৎক্ষণাৎ তাকে গুলি করে হত্যা করে এবং মাটিতে চাপা দেয়। অতঃ পর কয়েক রাউণ্ড এদিক ওদিক ফায়ার করে। খান সেনারা চর চন্দনবাইশার আইনুল হককে নির্মমভাবে হত্যা করে । ঐ সময় কয়েকজন গ্রাম্য লোক আহত হন। এরপর খান সেনারা প্রকাশ্যে নারী নির্যাতন করতে আরম্ভ করে। অকারনে যে কোন লোক জনকে ধরে নিয়ে খান সেনারা খেত। সেই কথা বলতে গিয়ে উক্ত গ্রামের লোক শাহ মনসুর আলী খান সেনাদের হাতে ভীষণ নির্যাতন ভোগ করেন। ঐ সংগে তার ছেলেকে খান সেনারা ভীষণভাবে মারপিট করে। খান সেনারা তাদের দুই ংগে সংগে তার বাড়ীতে অগ্নীসংযোগ করে বহু টাকার ধন-সম্পদ ভস্মীভূত করে দেয়। রাজাকারেরা বহু টাকার ধন-সম্পদ লুট করে নিয়ে যায়। সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে আমার পার্শ্ববর্তী বাড়ীর বাসিন্দা শওকৎ হোসেন মুনসীর মিথ্যা চক্রান্তে আমাকে খান সেনারা ধরে নেয়। ধরার সময় চড় ও রাইফেল দিয়ে ভীষণ আঘাত করে এবং খান সেনারা আমাকে ছেড়ে দেয়। পরের দিন আমার নিজ বাড়ী ও বড় ভাইয়ের বাড়ী খান পশুরা লুট করে যথা সর্বস্ব নিয়ে যায়। খান সেনারা আমাদের দুই ভায়ের ৪০০০ (চার হাজার) টাকার ধনসম্পদ অপহরণ করে নিয়ে যায়। প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ করা যেতে পরে যে, উক্ত এলাকার চতুর্দিকে খান সেনাদের ঘাঁটি থাকায় অসংখ্য বাড়ীঘর লুটতরাজ ও নারী নির্যাতন চালায়। আরও উল্লেখ করা যেতে পারে যে, সারিয়া কান্দি থানার মুক্তিযোদ্ধাদের একমাত্র ট্রেনিং সেন্টার এবং কেন্দ্রস্থল ছিল চন্দনবাইশা গ্রাম। স্বাক্ষর/খন্দকার ইউনুছ আলী ২০/৯/৭৩