পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/১৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Soఫి বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড ll ᏬᏊ l মোঃ আজাদুর রহমান মণ্ডল গ্রাম-হামিদপুর থানা-গাবতলী জেলা-বগুড়া খান সেনারা হঠাৎ একদিন হামিদপুর গ্রামে ঢুকে পড়ে। আমি কোন উপায় না দেখে অতি চতুরতার সাথে শরীরে কাদামাটি মেখে নিজের জমিতে চাষ করতে যাই। সেখান থেকে একজন খান সেনা আমাকে আক্রমণ করে। তখন আমি হাত থেকে গুরু তাড়ানোর লাঠি মাটিতে ফেলে দুহাত তুলে খান সেনার কাছে আত্মসমর্পণ করি। অতঃপর খান সেনা আমার গ্রামের নাম, মুক্তিবাহিনী এবং নিজে মুক্তি কিনা ইত্যাদি প্রশ্ন উর্দুতে জিজ্ঞাসা করে। জিজ্ঞাসা করার পর আমি উর্দুতে সমস্ত কথা তাকে বুঝিয়ে দেই। কিন্তু খান সেনা অবিশ্বাস করে এবং আমাকে মুক্তি ধারণা করে গুলি করার প্রস্তুতি নেয়। এরপর আমি মৃত্যু নিশ্চিত ভেবে ভাল করে পাকিস্তানী জাতীয় সঙ্গীত উর্দুতে ও বাংলাতে বলি। তারপর আমি আল্লাহর নিকট পাকিস্তানের জন্য এবং পাকিস্তানী সৈন্যদের দীর্ঘায়ু কামনা করি। তখন খানসেনারা গুলি না করে আমার বাড়ীর ভিতর নিয়ে আসে। অতঃপর স্ত্রী পুত্র আছে কিনা ইত্যাদি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে। স্ত্রীকে ডেকে আনে। ঐ সময় আমাকে ঘরের ভিতর একজন পাঞ্জাবী সৈন্য ডেকে নেয়। ঠিক ঐ সুযোগে ঐ খানটি আমার স্ত্রীর ৫ ভরী সোনার দুইটি বালা বাক্স খুলে নেয়। এরপর তারা ছেলের নাম জিজ্ঞাসা করে। তখন আমি পিস্তল ও জান্টার পর পর দুই ছেলের নাম বলি। তখন পিস্তলের কথা শুনে তারা পজিশন নেয়। আমি তাহ উর্দুতে বুঝিয়ে দেই। কারণ পিস্তল ও জান্টার আমার ছেলেদ্বয়ের ডাকনাম ছিল। এত বলা সত্ত্বেও খান সেনারা আমাকে ভারতের দালাল বলে বিবেচনা করে। আমি মুসলমান কিনা তা দেখার জন্য আমার লুঙ্গী খুলতে বলে। একজন বেলুচী সৈন্য তা নিষেধ করে। ঐ বেলুচী সৈন্যটি আমাকে বারবার সাহায্য করে আসছে। আমি তখন বলি যে, আপনি আমাকে গুলি করে মেরে ফেলেন। তবুও আমি নিজের ইজ্জত দেখাব না। আরও বলি যে, আমি যদি প্রকৃতই মুক্তি হয়ে থাকি, তাহলে আপনাদের ক্যাপ্টেনের কাছে নিয়ে চলুন। তিনিই বিচার করবেন। অতঃপর আমাকে ক্যাম্পে আসে।ক্যাম্পে এসে কিছু সময় পর দেখতে পাই যে হাত বেঁধে একটি ছেলেকে রাস্তার উপর নিয়ে আসছে। ব্রিগেডিয়ারের নির্দেশ মোতাবেক তাকে লাথি মেরে ক্যাম্পে নিয়ে আসে। পরপর কয়েকবার বুট জুতার লাথি মেরে তাকে নিষ্ঠুরভাবে মেরে ফেলে। এরপর আমাকে গুলি করার নির্দেশ দেয়। তখন আমি বলি খান সাহেব মৃত্যুর আগে আমি কয়েকটি কথা বলব, তখন আমাকে কথা বলার জন্য সময় দেয়। অতঃপর আমি চতুরতার সাথে পাকিস্তানী জাতীয় সংগীত গাই এবং পাকিস্তানী ফৌজ ও পাকিস্তানের দীর্গায়ু কামনা করি। এরপর ব্রিগেডিআর আমার লেখাপড়া কতটুকু জানতে চায়। আমি আরও চতুরতার সহিত বলি যে দ্বিতীয় শ্রেণীতে। ব্রিগেডিয়ার বলে যে, তা হলে তুমি এত ভাল উর্দু কেমন করে শিখলে? জবাবে আমি বলি যে, ভাষা আন্দোলনের সময় উর্দু ভাষার উপর যখন জোর দেওয়া হয়েছিল, সেই সময় আমি উর্দু ভাষা শিক্ষা করেছি। বার বার একই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করার পর ব্রিগেডিয়ার পুনরায় গুলির হুকুম দেয়। তখন আমি কোন উপায় না দেখে বলি যে, খান সেনা আপনার মত আমরাও একজন পাক ফৌজের ক্যাপ্টেন আছে। যার নাম কুদরতে খোদা (বাবলু)। ১৯৬৫ সনের যুদ্ধে তিনি কুদরতে খোদা খেতাব পেয়েছেন। এই কথা শুনে তিনি ওয়্যারলেসে যোগাযোগ করেন। এরপর সেখান থেকে সঠিক খবর নিয়ে আমাকে ছেড়ে দেয়। ছেড়ে দেওয়ার পর খান সেনাদের সাহায্য করার কথা, পাকিস্তানের হেফাজতের কথা এবং মুক্তিদের খোঁজ খবর দেওয়ার কথা বলে। এরপর আমি বাড়ী চলে যাই। এর কিছু দিন পর খানসেনারা নাডুয়া মালা হাটে জনসাধারণ নিয়ে মিটিং এর জন্য নাডুয়া মালা হাটে চলে যায়। আমিও ঐ দিন উক্ত হাটে যাই। মিলিটারীর কথা শুনে হাটের লোকজন দৌড়াদৌড়ি করে চলে যায়। আমি একটি গ্রেনেড নিয়ে জঙ্গলের ভিতর শুয়ে পড়ি খানসেনারা সেখান থেকে আমাকে দ্বিতীয়বার ধরে। আমাকে জিজ্ঞাসা করে যে, তুমি কেন জঙ্গলের ভিতর। নিশ্চয়ই তুমি মুক্তিফৌজ এই বলে আমাকে গাড়ীতে তুলে পুনরায় হাটে নিয়ে আসে। হাটের ভিতর