পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/১৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২০
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খণ্ড

ঘাঁটিতে রেখে জামাল ডাক্তারের বাসায় পুনরায় আসে এবং তার স্ত্রীকে খোঁজাখুঁজি করতে থাকে। তার স্ত্রীকে না পেয়ে তার শাশুড়ীকে ধরে মোটরে উঠায় ও তার মেয়েকে বের করে দেয়ার জন্য ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে। রাত্রিতে মুক্তিবাহিনী অতর্কিতে থানা আক্রমণ করে। তখন সারিয়াকান্দি থানায় মিলিটারী ছিল। থানা আক্রমণের পরপরই ভীষণ বৃষ্টি আরম্ভ হয়। দুই পক্ষে ভীষণ গোলাগুলি হয় কিন্তু বৃষ্টির বেগ আরো প্রবল হওয়ায় মুক্তিযোদ্ধারা ফিরে যেতে বাধ্য হয়। তারপর প্রায়ই খবর পাওয়া যেতে লাগল আজ এ দালাল খতম, কাল ও দালাল খতম। পাকিস্তানী বাহিনী তাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার দেখতে লাগল। ইতিমধ্যে থানায় পশ্চিম ও,সি-কে পাঠান হয়েছে। তার চেষ্টায় প্রায় ৭০/৮০ জন রাজাকার সংগ্রহ করা হয়েছে। এল পশ্চিমা পুলিশ। এদের বাবা-মা মানুষ কিনা আমার জানা নেই। তবে এরা আকৃতিতে মানুষ হলেও আসলে ছিল কুকুর। মুক্তিবাহিনীর তৎপরতায় তাদের যাতায়াত বন্ধ করে দেয়া হল। রাজাকাররূপী একজন মুক্তিবাহিনীর ছেলেকে তারা টের পেয়ে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে এবং হাত-পা কেটে নদীতে ফেলে দেয়। সারিয়াকান্দি এক্সচেঞ্জ হতে পাকবাহিনীর সংখ্যা এবং তাদের গোলা বারুদের খবর জেনে ভোর পাঁচটায় সারিয়াকান্দি আক্রমণ করা হয়। দুর্ভাগ্যবশতঃ উক্ত যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর দুইজন যুবক প্রথমেই নিহত হওয়ায় তারা ফিরে যেতে বাধ্য হন। বগুড়া ও গাবতলী থেকে হানাদার বাহিনীদের ডাক আসে এবং তাদরকে থানা ছেড়ে অতিসত্বর বগুড়া চলে যাবার নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু ইতিমধ্যেই মুক্তিবাহিনী কর্তৃক রাস্তা বন্ধ হওয়ায় তারা চলে যাবার কোন পথ পেল না। ১৯৭১ সালের ২৬শে নভেম্বর সকাল ঠিক এগারটায় মুক্তিযোদ্ধারা সম্মিলিতভাবে সারিয়াকান্দি থানাতে অবস্থানরত হানাদার বাহিনীদেরকে আক্রমণ করে। বিকাল তিনটার সময় এক্সচেঞ্জে অবস্থানরত বাহিনীদের পতন ঘটে। সারাদিন এবং সারারাত যুদ্ধের পর ২৭শে নভেম্বর সকালে হানাদার বাহিনীসহ থানার পতন ঘটে। শতাধিক রাজাকার ও পুলিশ মুক্তিবাহিনীর দ্বারা আটক হয়। আটককৃত পুলিশদেরকে ভারতে বিচারের জন্য পাঠিয়ে দেয়া হয়। রাজাকারদের বিচার করা হয় যমুনা নদীর পাড়ে। বিচারে কিছু রাজাকার রক্ষা পায় এবং অবশিষ্টগুলো যমুনা নদীতে তাদের সলিল সমাদি লাভ করে। থানার পতনের পর শুরু হয় উড়োজাহাজ থেকে বোমা বিস্ফোরণ ও মেশিনগানের গুলিবর্ষণ। উক্ত এমনি গুলিতে নিহত হয় পাকুড়িয়া গ্রামের পুকরা মণ্ডলের ছেলে দুদু মণ্ডল। সে মুক্তি বাহিনীদেরকে নিয়ে ভারতে যাচ্ছিল এবং মেশিনগানের গুলিতে নৌকা থেকে নদীতে পড়ে যায়। বর্বর পাক বাহিনীর রাইফেলের গুলিতে নিহত হয় উক্ত গ্রামের জাফর সরদারের ছেলে জহির উদ্দিন। মেশিনগানের আর একটি গুলিতে সারিয়াকান্দির আছমতের মা নিহত হয়।

 দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় সারিয়াকান্দি থানা পতনের পূর্ব রাত্রিতে পাকিস্তানী বাহিনীর অধিকাংশ পালিয়ে যেতে সক্ষম হয় এবং তার কিছু অংশ রাস্তায় মারা পড়ে। বাকীগুলো সম্বন্ধে কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। ফলে অত্র থানার অনেক অস্ত্রশস্ত্র মুক্তিবাহিনীর হাতে আসে।

স্বাক্ষর/-
মো: জালালউদ্দিন
২২/০৯/৭৩