পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/১৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩৪
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খণ্ড

॥ ৮২॥
মোঃ আজিম উদ্দিন
গ্রাম-গাছিডাঙ্গা
থানা-ভুরুঙ্গামারী, রংপুর

 পাক বর্বর বাহিনী ভূরুঙ্গামারী থানা পূর্ণ দখলে নেবার দুই মাস পর গাছিডাঙ্গা গ্রামের দিকে ধাওয়া করে। পাক দস্যুদের সংখ্যা ছিল ৭ জন। তারা উক্ত গ্রাম গাছিডাঙ্গায় ঢুকে স্থানীয় (মৃত) হাজী আবদুস ছাত্তার সাহেবকে ধরে আনে। ধরে এনে তাকে গ্রামের আরও অন্যান্য লোকজনকে তাদের কাছে নিয়ে আসার জন্য হুকুম করে। তখন হাজী সাহেব জীবনের ভয়ে গাছিডাঙ্গার নিম্নলিখিত জনসাধারণকে খান দস্যুদের সামনে হাজির করতে বাধ্য হন। নিম্নে তাদের নাম দেওয়া হলঃ (১) মোঃ ফরিদ (২) পনির উদ্দিন (৩) মঈন উদ্দিন (৪) আবুল কাশেম (৫) ফটিক (৬) আইন উদ্দিন (৭) আজিম উদ্দিন (৮) নাছের উদ্দিন (৯) নুরুল ইসলাম (১০) নাছু শেখ (১১) ময়েত উল্লাহ প্রমুখ। অতঃপর আমাকে জিজ্ঞাসা করে যে, মুমি মুক্তিফৌজ এবং মুক্তিদের সহায়তা কর। অবশ্য এসব কথাগুলি উর্দুতে জিজ্ঞাসা করে। পরপর সবাইকে এইসব কথা জিজ্ঞাসা করে। তখন আমি ও সঙ্গীরা অস্বীকার করি। তখন খান দস্যুরা রাইফেলের বাঁটের সাহায্যে আমাদের ভীষণভাবে আঘাত করতে থাকে। তাছাড়া কিল, ঘুষি ও বুটের লাথিতে সবাইকে ভীষণভাবে আঘাত করে। পর মুহূর্তে আমাদের সবাইকে লাইনে দাঁড় করে কলেমা পড়তে বলে। তখন আমরা সবাই জীবনের ভয়ে ভুল করে কলেমা পড়তে আরম্ভ করি। তখন খান সেনারা বলে যে, তোমরা মালাউন এবং তোমরা নিজেরা মুক্তিদের লীডার এবং মুক্তিদের সাহায্য কর। এই মনে করে খান দস্যুরা পুনরায় কিল, ঘুষি ও রাইফেলের সাহায্যে আঘাত করে। আমি আমার সঙ্গীরা অচৈনত্য হয়ে পড়ি। পাশে অবস্থানরত মুক্তিরা জানতে পেরে তাদেরকে উদ্দেশ করে ফাঁকা গুলি করতে থাকে। খান দস্যুরা সব বুঝতে পেরে পুনরায় ভুরুঙ্গামারীর দিকে পিছু হটতে বাধ্য হয়। কিছু সময় পর আমাদের জ্ঞান ফিরে। খান দস্যুদের আর আমাদের পাশে দেখতে পাই না। তখন আমরা কোন রকমে আধা মরা অবস্থায় দূর দূরান্তে আত্মগোপন করতে বাধ্য হই। খান দস্যুদের হাতে বেদম মারপিট খেয়েও আমি কোন রকমে বেঁচে আছি।

টিপসহি/-
মোঃ আজিম উদ্দিন