পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/১৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪৪
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খণ্ড

॥ ৮৯॥
মঈনুদ্দিন আহমদ
গ্রাম- আবদুলপুর
থানা- চিরিরবন্দর
জেলা-দিনাজপুর


 ১৪ই আগষ্ট তারিখে আমি যখন দিনাজপুরে গিয়েছিলাম তখন মাহরাজা স্কুলের সামনে খান সেনাদের ক্যাম্পের কাছে রাস্তায় আমাকে গ্রেফতার করে। প্রথমে ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে পাশবিক অত্যাচার করে। সেখানে বেদম প্রহার করে। রাইফেলের নল ও গাদা দিয়ে, বেত দিয়ে অমানুষিকভাবে অত্যাচার করে। অত্যাচারের নির্মমতায় আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। উল্লিখিত পদ্ধতিতে আমাকে বহুক্ষণ ধরে অত্যাচার করে। এ সময় শরীরের বিভিন্ন স্থানে রাইফেলের বাঁট দিয়ে গুঁতাতে থাকে। রাইফেলের বাঁটের আঘাত আমার মুখের ডান দিকের দুটি দাঁত ভেঙ্গে দেয়। অত্যাচারের পর আমাকে ক্যাম্পের অদূরে জঙ্গলে গুলি করে হত্যা করবার জন্য নিয়ে যায়। জনৈক বাঙ্গলী ইপিআর সে সময় সক্রিয় সহযোগিতা করে গুলির হাত থেকে আমাকে রক্ষা করে। ক্যাম্পে সারা দিন সারা রাত অনাহারে রাখার পর আমার সাথের সমস্ত টাকা-পয়সা ও পায়ের জুতা কেড়ে নিয়ে পরদিন কোেতায়ালিতে স্থানান্তরিত করে। পরে সেখান থেকে ছেড়ে দেয়।

 মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসে অবঙ্গালীরা মাঝে মাঝে গাড়ি করে বিভিন্ন এলাকায় যেত এবং গাড়ি থামিয়ে লুটপাট করত, মানুষ হত্যা করত, মেয়েদের উপর পাশবিকভাবে নির্যাতন করত এবং তাদের প্রভু খান সেনাদের জন্য উপঢৌকন হিসেবে ধরে নিয়ে যেত। তারা মেয়েদের উপর প্রথমে অত্যাচার করত, তারপর তার গুপ্তঙ্গের ভিতর রাইপেল বন্দুকের নল ঢুকিয়ে দিত। এক একটি মেয়ের উপর ৭-৮ জন অত্যাচার করত। অত্যাচারের পর নির্যাতিতা মহিলাদের বহুজন এমনি মারা যেত। তারা প্রকাশ্যেই এ অত্যাচার করত।

 রাস্তার পথিকদের ধরে ক্যাম্পে নিয়ে যেত এবং সেখানে নির্দয় অত্যাচার করত এবং গুলি করে হত্যা করত। ঝোপ-ঝাড়ে কাকেও দেখলে সেখানেই গুলি করে হত্যা করত। তারা খাসী-মুরগী-হাঁস-গরু ধরে নিয়ে যেত, ভাল ভাল কাপড়-গয়নাগাটি নিয়ে যেত।

স্বাক্ষর/মঈনুদ্দিন আহমদ