পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/১৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪৬
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খণ্ড

 ঠিক সেই মুহূর্তে আমি লক্ষ্য করি যে, পূর্বেই আনা সেই দুজন মুরুব্বী লোককে খান সেনারা চতুর্দিক হতে ফুটবলের মত লাথি মারছে। এভাবে মারার পর লোক দুটিকে আমার কাছে নিয়ে আসে। এবং আমার কাছ হতে গরু বান্ধারশি নিয়ে উক্ত মুরুব্বব্বী দুজনকে মজবুত করে বাঁধে। অত:পর আমাকেসহ ৪ জনকে কিছু দূরে ক্যাপ্টেনের কাছে নিয়ে যায়। ক্যাপ্টেন আর্মি লোকদের কাছ থেকে জানতে চান যে, ধৃত ব্যক্তিরা কারা। জবাবে তারা বাঙ্গালী জানতে পারলে উল্লিখিত দুই বৃদ্ধাকে প্রহারের নির্দেশ দেয় এবং তাদের উপর হৃদয়হীন নির্যাতন চলতে থাকে। নির্যাতন চলা অবস্থায় উক্ত ক্যাপ্টেন তাদের জয় বাংলা বলার নির্দেশ দেয়। তারা তা না বলে পাকিস্তান জিন্দাবাদ বললে তাদের উপর আরও প্রবলভাবে অত্যাচার করে। এই সময় আমাকে জ্য বাংলা বলতে বলা হয়। আমি তা বলি, ক্যাপ্টেন আমাকে বলে “ঠিক হায় মৌলভী সাব আপকো হাম ইণ্ডিয়া ভি লিয়ে যায়েগো।“

 অতঃপর ৪জনকেই পূর্ব দিকে নিয়ে যেতে শুরু করে। এবং একটি খালের কাছে গিয়ে থেমে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। এ সময় একটি বেয়নেট দিয়ে উক্ত বৃদ্ধদুটির শরীরের সমস্ত কাপড় কেটে উলঙ্গ করে। এবং তাদের তলপেটে থাপড়িয়ে বলে “বাঙ্গালী আদমী খাড়া হায়, আওর ভুঢ়িনে তেল লাগাতা হায়।” এরপর ঐ দু'জনকে গুলি করে। একজন একটু মাথা আছড়াতে থাকলে তার মাথা লক্ষ্য করে আবার গুলি করে। ফলে তার মাথার মগজ ছিটকে চলে যায়। এ সময় দক্ষিণ দিক থেকে দুজন গাড়োয়ানকে গাড়িসহ ধরে আনে এবং আমার কাছ থেকে “মোলভী সাব হামকো একটা রশি দিজিয়ে আপ” বলে রশি চেয়ে নেয় এবং তাদের হাত বাঁধে। অত:পর তাদের একজনকে যে ৩০-৩৫ বছর বয়সের যুবক ছিলেন তাকে মারতে থাকে। মারের চোটে সে জ্ঞান হারাবার উপক্রম হলে তাকে জোর করে তুলে ধরে উলঙ্গ করে এবং তার গুহ্যদ্বারে নড়ি ঢুকিয়ে দেয়। এ পদ্ধতিতে কিছুক্ষণ অত্যাচার চালাবার পর তার হাত বেঁধে গাড়ির পিছনে বেঁধে দেয় এবং অপর ব্যক্তিকে জোরে গাড়ি হাঁকাবার নির্দেশ দেয়। এ সময় তারা আমাকে বলে “মোলভী সব আপ চালিয়ে ইণ্ডিয়া।” রেল লাইনে সকলে আসা শুরু করে। রাস্তার মাঝ থেকে বেশ কয়েকটি খাসী ধরে গাড়িতে তুলে নেয়। মরা নদীর ভাঙ্গা ব্রীজের কাছে এসে জনৈক খান আমাকে তার কাছে ডেকে বসায় এবং জিজ্ঞাসা করে “মৌলভী সাব, আপ সাচ সাচ বাতলাইয়ে আওয়ামীলীগ পার্টিকো লোগ কাঁহা, স্কুল কো ছাত্রা কাঁহা, আওর মালাউন কাঁহা।” উত্তরে আমি জানাই যে “সব ইণ্ডিয়ামে চল গিয়ে, কোই আদমী নেহি হ্যায়।” জোভি হ্যায় ওভি পাকিস্তান কো নাগরিক হ্যায়। এতে আমাকে মিথ্যাবাদী বলে আখ্যায়িত করে। এ সময় আমাকে একটি সিগারেট খেতে দেয় এবং উক্ত প্রশ্ন গুলি আবার জিজ্ঞাসা করে।

 অতঃপর ইণ্ডিয়ায় পৌঁছে দেবার নাম করে আমাকে, সঙ্গীত ও গাড়ির দুজনকে এবং গাড়ির গরু দুটিসহ ক্যাম্পের দিকে আসতে থাকে। ক্যাম্পের নিকট ব্রীজের কাছে এসে হুইলের দিলে ৫০-৬০ জন খান সেনা সেখানে যায়। তারপর সকলে ষ্টেশনে আসে। ষ্টেশনে পরিচিত জনৈক অবাঙ্গালীকে দেখে আমি সুপারিশের জন্য খানদের অনুরোধ জানাই।

 সেখান থেকে ধৃত সকলকে ক্যাম্পে নিয়ে যায়। গাড়োয়ান দুজনকে একটি আলাদা কুঠুরিতে বন্দিকরে রাখে। এবং আমাদের ব্রীজে যে সিপাই জিজ্ঞাসা করেছিল তার ঘরে বসতে দেয়। এবং চা খেতে দেয়, সিগারেট খেতে দেয়।