পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/১৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৫১
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খণ্ড

করে। সন্তোষজনক উত্তর না পেয়ে আমাকে দ’ঘণ্টা করে গাছে উল্টো দিকে করে লটকাবার নির্দেশ দেয়। নির্দেশ মোতাবেক আমাকে পা উপরে এবং মাথা নীচে করে লটকিয়ে দেওয়া হয়। ঐ অবস্থায় ওরা খুব পাশবিক উল্লাস করেছে, হাসাহাসি করেছে। শরীরের বিভিন্ন প্রক্রিয়ার গুতো দিয়ে মশকরা করেছে। দু'ঘণ্টা পর অজ্ঞান অবস্থায় আমাকে নামানো হয়।

 পরদিন আবার জনৈক অফিসার এসে ডেকে চেম্বারে নিয়ে যায়। সেখানে এক বন্ধ ঘরে উলঙ্গ অবস্থায় পা ফাঁক করে দাঁড় করিয়ে রাখে এবং পুরুষাঙ্গে দুটো ইট বেঁধে দেয়। ঐ ইটের উপর আবার পানি ঢালা হয়েছিল। সামান্য নড়াচড়া করলে লাথি ঘুষি ও বেত প্রহার করত। এ প্রক্রিয়ায় আমাকে দেড় থেকে ২ঘণ্টা রাখা হয়। অবস্থায় আরও দু'জনকে এদিন শাস্তি দেয়।

 এর দু'দিন পর রাত তিনটার সময় পাঁচজন সামরিক লোক এসে আমাকে সহ ২১ জনকে ডাকে। গেটে আসার পর সকালের হাত বাঁধা হয় এবং কালো কাপড় দিয়ে চোখ কান কষে বাঁধা হয়। অত:পর আমাদেরকে ট্রাকে করে কোথাও নিয়ে গিয়ে নামানো হয়। অবস্থা দৃষ্টে স্থানটিকে নরম মনে হয়েছে। দ’একটি ঘাস অথবা ছোট ঘাস জন্মেছিল। সেখানোনার পর এক একজনকে সারি থেকে খুলে নিয়ে যেতে থাকে। নিয়ে যাবার পর শুধু খাশী গরু জবাই করলে যেমন শব্দ হয় তেমনি করুন ও হৃদয়বিদারী শব্দ শোনা যেত। তারপর হাত-পা আছড়ানোর মত শব্দ কিছুটা কানে ভেসে আসত। এমনি করে ১৯জনকে সারি থেকে যাবার পর আমাকেসহ আর একজনকে জেল খানার ফিরিয়ে নিয়ে আসে। সেখানে চোখ ও হাত খুলে দেয় এবং সেখানেই জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে: দলে কে কে আছে তাদের নাম বল এবং ‘সুন্দর বন’ গাড়ী কোথায় আছে বল? সন্তোষজনক উত্তর না পেয়ে মাথার চুলের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে প্রাচীর সাথে আঘাত করতে থাকে এবাং বুট দিয়ে২/৩টি লাথি বুকে মারে। আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। জ্ঞান ফিরলে আমি মুখে রক্ত দেখতে পাই। ডাক্তার এসে আমাকে ঔষধাদি খাওয়ানোর পর পুনরায় হাজত খানার পুরে রাখে। আমার সাথে জনৈক মেকানিক সিরাজ মিয়াকে ধরে অনুরুপভাবে অত্যাচার করে। হাত-পায়ে পেরেক মেরে পাছার মাংস কেটে কুকুরকে দিয়েছে। সে অবশ্য এখনো জীবনমৃত অবস্থায় বেঁচে আছে। জেলখানার ভিতর তিনজন যুবতী মেয়েকে দেখেছি। তাদের করুন কান্না ও চিৎকার ধ্বনি শুনছি।

 এ অবস্থায় ৭ মাস তিনদিন থাকার পর ১৬ ই ডিসেম্বর ভোর পাঁচটায় মুক্তি বাহিনীর জোয়ানরা জেলখানার তালা ভেঙ্গে আমাকেসহ সকল বন্দীকে ছেড়ে দেয়। বর্তমানে পঙ্গু অবস্থায় আছি। আমি কোন রকম কাজ করতে পারি না।

স্বাক্ষর /-
রফিকুল ইসলাম