পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/১৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৫৪
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খণ্ড

॥ ৯৬॥
আবদুল হামিদ
গ্রাম নাজির পুর
থানা ও জেলা পাবনা

 ৪ঠা রমজান ভোর রাতে ১২৫ জনের মত পাক সৈন্য ও রাজাকার আমাদের গ্রাম ঘিরে ফেলে। শান্তি কমিটির লোকেরা তাদের খবর দিয়েছেন যে মুক্তি বাহীনীর লোক ঐ গ্রামে থাকে এবং গ্রামবাসীরা তাদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করছে। শান্তি কমিটির লোকদের দেখিয়ে দেওয়া বাড়ী ঘর প্রথমে লুটপাট করে। তারপর আগুন লাগিয়ে অন্যূন ৮/৯ টি বাড়ি পুড়িয়ে দেয়।

 এ সময় দজন লোক বাড়ী থেকে পালিয়ে যাচ্ছিল। মিলিটারীরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি করে। ফলে তারা দুজনই মারা যায়। গ্রাম থেকে অন্যান্য জিনিসপত্রের সাথে গরু, ছাগল, মুরগী ধরে নেয় তাদের উদর পুর্তির জন্য।

 এই অপারেশনে আমি ধৃত হই। তারা আমাকে মুক্তিবাহিনীর লোক সনে হে গ্রেফতার করে। ধরার পর প্রথম পর্যায়ে আমাকে চড়, থাপ্পড়, কিল, ঘুষি এবং লাথি মেরে প্রহর করতে থাকে। তারপর তারা আমার দ’হাত পিছনে বেঁধে তাদের সাথে করে সার্কিট হাউস ক্যাম্পে নিয়ে আসে।

 ক্যাম্পে নিয়ে আসার পর তারা আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। আমি মুক্তিবাহিনী কি না? আমি কত জনকে হত্যা করেছি এবং আমার দলে কতজন আছে? আমার সেই সমস্ত সঙ্গীরা কোথায় আছে এবং আমার অস্ত্রশস্ত্র কোথায় আছে তা জানিয়ে চায়। আমি মুক্তিবাহিনীর লোক নই এবং তাদের কোন খবর জানিনা বললে আমার উপর শাররিক নির্যাতন শুরু করে। বেতের লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়িভাবে মারতে থাকে। পর্যায়ক্রমে ২/৩ জনে আমকে মারে। এর সাথে চড়, ঘুষি, লাথি তো আছেই।

 কিছুক্ষণ পর পর ৩/৪ ঘণ্টা এমনিভাবে আমার উপর অত্যাচার চলে। অত্যাতার চলার সময় আমার হাত পিছন দড়ি দিয়ে বাঁধা ছিল। অত্যাচার চালানোর পর আমাকে একটি ঘরে তিন দিন বন্দ করে রাখে। অত্যাচারের এক আমি একবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।

 বন্দী অবস্থায় তারা আমাকে রুটী এবং লাবড়া জাথীয় তরকারী খেতে দিত। প্রসাব পায়খানার সময় তারা আমাকে কড়া পাহারা দিত।

 তিনদিন পর আমার আত্মীয় স্বজন টাকার বিনিময়ে শান্তি কমেটির দ্বারা আমাকে মুক্ত করে নিয়ে আসে।

স্বাক্ষর /-
আবদুল হামিদ