পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/১৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৬৬ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড ΙΙ Σ Ο ΑΙ গোলজার হোসেন ডাকঘর- দুর্গানগর থানা- উল্লাপাড়া জেলা- পাবনা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ মুক্তি যুদ্ধ শুরু হলে আমি,ইয়াকুব ও আবু সামা গেনজির ব্যবসা শুরু করে। আগষ্ট মাসে আমরা গেনজি বিক্রয় করার জন্য উল্লাপাড়া হাটের উদ্দেশ্যে বাড়ী হতে রওনা হয়ে যাই। উল্লাপাড়া পেট্রোল পাম্পের নিকট পাক হানাদার বাহিনীর ক্যাম্প ছিল, তারা আমাদেরকে ধরে ফেলে এবং আমাদের অনেক প্রশ্ন জিজ্ঞাসাবাদ করে। যেমন (ক) ভোট কাকে দিয়েছ? (খ) নৌকায় কেন ভোট দিলে? (গ) শেখ মুজিবকে কেন ভোট দিলে? ইত্যাদি জিজ্ঞাসাবাদ করার পর আমাদের তিনজনের টাকা পয়সা মিলে প্রায় ১৫০ টাকা চার্জ করে নেয়। সেখানে ৪/৫ জন বিহারী উপস্থিত ছিল। তারপর আমাদের ছেড়ে দিলে আমরা ক্যাম্প পার হয়ে ৯/১০ গজ অতিক্রম করার সাথে সাথে উক্ত বিহারী কয়জন দৌড়িয়ে আমাদের নিকট যায় এবং আমাদেরকে ডেকে নিয়ে উল্লাপাড়া ষ্টেশন ঘরের মধ্যে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে বিশ্রামাগারের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়ে বাইরে এসে আলাপ আলোচনা করে আমাদেরকে মেরে ফেলবে না বাঁচিয়ে রাখবে। আমরা দরজার নিকট এসে তাদের কথাবর্তা সব শুনতে পাই। তারপর সিদ্ধান্ত নেয় আমাদেরকে হত্যা করবে। আমরা তিনজন চিন্তা ভাবনা করি কি করা যায় এখন। এমন সময় দরজা খুলে আবু সামাকে রুম হতে গলায় দড়ি লাগিয়ে বের করে নেয় এবং আমাদেরকে দরজা বন্ধ করে দিয়ে যায়। তারপর আবু সামার সমস্ত শরীরে বেয়োনেট চার্জ করে পরে গরু জবাই করার মত গলায় ছুরি দিয়ে জবাই করে তাকে হত্যা করে। তারপর আবার এসে দরজা খোলে এবং ইয়াকুবকে বের করে নিয়ে যাওয়ার সময় আমি বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি এবং আমাকে ২/৩ জন ধরে রাখার চেষ্টা করলে আমি মরণপণ স্বীকার করে জোরপূর্বক ৪/৫ টা লাথি মেরে এক দৌড়ে বালসা বাড়ী এসে পড়ে যাই এবং জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। উক্ত গ্রামের তিনজন ছেলে আমার ক্লাসমেট ছিল। তারা আমাকে দেখে সেবা যত্ন করে জ্ঞান ফিরে পেলে আমাকে আমাদের বাড়ী এনে রেখে যায়। ইয়াকুব তাদের হাত হতে মুক্তি পায়নি। তারা ইয়াকুবকে নিয়ে গিয়ে আবু সামার মত একই পদ্ধতিতে হত্যা করি দুইজনকে একই স্থানে ফেলে রাখে এবং আমাদের তিনজনের প্রায় ১৫০/২০০শত টাকার গেনজি তারা নিয়ে যায়। আমি বাড়ী আসার পর সমস্ত ঘটনা খুলে বলি। গ্রাম হতে ৪/৫ জন লোক মিলিটারী ক্যাম্পে যায় উক্ত লাশগুলো এনে কবর দেবার অনুমতির জন্য। তারপর একটা ট্রাকে করে উক্ত লাশ দুটো মহেষপুর লাইনে এনে রেখে যায়। গ্রামবাসী সেখান হতে লাশ দুটো তাদের বাড়ীতে নিয়ে আসে। বাড়ী আনার পর আমরা দেখতে পাই আবু সামার ও ইয়াকুবের সমস্ত শরীরে প্রায় শতাধিক বেয়োনেটের চিহ্ন এবং গলায় ছুরি চালিয়ে হত্যা করেছে তার চিহ্ন দেখা যায়। তারপর তাদেরকে গ্রামবাসী কবর দেন। আবু সামার স্ত্রী বর্তমানে ৪/৫ জন ছেলে মেয়ে নিয়ে বিধবা হয়েছে। আর ইয়াকুব আই, এ, দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিল। আমি ইনশা আল্লাহ পাক হানাদার বাহিনীর সহযোগীদের হাত হতে কোন প্রকারে রক্ষা পেয়েছিলাম। সাক্ষর/ গোলজার হোসেন ২৪/১১/৭৩