পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/১৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৬৮ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড l めの冷 l মোঃ ফজলুল করিম তালুকদার গ্রাম- চর মোহনপুর থানা- উল্লাপাড়া জেলা- পাবনা ভাদ্র মাসের ৩রা তারিখে ভোর ৬টার সময় পাক দালালদের সহযোগিতায় নৌকাযোগে চর মোহনপুর গ্রাম ঘেরাও করে। গ্রামের চারিদিকে ঘেরাও করে মোট ১৭ জনকে ধরে। এর মধ্যে একজন ছিল হিন্দু। ১৭ জনকে ধরে প্রথমে লাহিড়ী মোহনপুর ষ্টেশনের ১টা ঘরে তালাবন্ধ করে রাখে। তারপর ব্রেক গাড়ীতে উঠায়। তারপর তাদেরকে প্রথম প্রশ্ন করে যে তোমরা ভোট দিয়েছো কাকে। তার জবাবে তারা উত্তর দেন যে আমরা সবাই বাঘে ভোট দিয়েছি। তখন তাহারা বলে যে শালারা সবাই বাঘে ভোট দিয়েছো তবে এই এলাকায় বাঘে ৬ ভোট পেলো কি করে। এই বলেই পাক কুকুরেরা রাইফেলের বট দিয়ে ও মাজার বেল্ট দিয়ে মারতে থাকে। পর্যায়ক্রমে দশ/ বারজন মিলিটারী মারধোর করে। সামনে হাজির করে। সেখানে তাদেরকে বলে যে তোমরা মুক্তিযোদ্ধা। তোমরা বিহারীদেরকে মেরেছো ইত্যাদি ইত্যাদি বলে তাদেরকে প্রহার করতে থাকে। একদিন পর তাদেরকে নিয়ে যায় পাকশী, সেখানে একটা অন্ধকার কক্ষে তাদের সবাইকে আটকিয়ে রাখে। ২দিন পর ১টা রুটি খেতে দেয়। যেখানে তাখা সেখানেই পায়খানা প্রশ্রাব করতে হত। তাদেরকে দুই পা ফাঁক করে এবং দুই হাত ফাঁক করে দাঁড় করিয়ে রাখতো ৫/৬ ঘন্টা করে। পাকশীতে তারা ৫ দিন থাকে। এই সময় প্রত্যেক দিন তাদের উপর অকথ্য অত্যাচার করা হত। তাদেরকে প্রশ্ন করত যে শান্তি কমিটির চেয়ারম্যানকে কে হত্যা করেছে। কার কার ছেলে মুক্তিযোদ্ধা হয়েছে। কে কে আওয়ামী লীগের লিডার, কে কে হিন্দু ইত্যাদি। কিন্তু তারা সে কথা বলতে অস্বীকার করাতে তাদের উপর চালাতো অকথ্য নির্যাতন। ৫ দিন পর ২ জন বিহারী ও একজন খান তার নাম হান্নান খান তাদের সহায়তায় তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ২ জন বিহারী ও খান সাহেব পাকশীতে গিয়ে মেজরের কাছে বলে যে এই সব লোক ভাল। এরা আমাদেরকে রক্ষা করেছে। এরা সৎ লোক। এই লোকগুলোকে যদি মারেন তাহলে আমাদের তিনজন অবাঙ্গালীকে আগে মারেন। এদের কথার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের ছেড়ে দেয়। তাদের যখন ছেড়ে দেয় তখন বলে দেয় যে তোমরা শান্তি কমিটির সাথে যোগাযোগ রাখ এবং লোকজনকে বুঝাও। যদি তা না কর তবে তোমাদেরকে পুনরায় ধরব এবং সেবার তোমাদেরকে হত্যা করব। চেয়ারম্যানের কথা মত সব কাজ করবে। সাক্ষর/মোঃ ফজলুল করিম তালুকদার