পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/১৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Տ ԳՋ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড ll Σ Σ Φ Il এস এম আফতাব হোসেন সাব ইন্সপেক্টর টি, এ্যা-, টি গ্রাম- চর মোহনপুর পোষ্ট- লাহিড়ী মোহনপুর থানা- উল্লাপাড়া জেলা- পাবনা মে মাসের ১৩ তারিখে বেলা ১০ টার সময় আমি বাড়ীতে বসে ছিলাম। এমন সময় পাক বাহিনী ও অবাঙ্গালী মোট ১০০ জন আমার বাড়ী ঘেরাও করে। আমাকে প্রথমে জিজ্ঞাসা করে যে তুমি ডিউটি থেকে পালিয়ে এসেছো কেন? তার উত্তরে বলি যে সবাই কাজ ছেড়ে পালিয়ে এসেছে আমিও সেই সঙ্গে পালিয়ে এসেছি। এই কথার পরে আমাকে বাড়ী থেকে নিয়ে যায় এবং রেল গাড়ীতে উঠায়। বলা প্রয়োজন যে অবাঙ্গালী ও পাক বাহিনী ট্রেন যোগে মোহনপুর আসে। ট্রেনে তোলার পর আমার উপর অমানুষিক অত্যাচার আরম্ভ করে। কিল, ঘুষি, লাথি, এবং চাবুক মারতে থাকে। তারা আমাকে বলে যে, তুমি রাইফেল ট্রেনিং নিয়েছ, তুমি কর্নেল ওসমানীর আদেশ মোতাবেক ইশ্বরদী বিমানবন্দরে ১১ জন পাইলটকে গুলি করে মেরেছে এবং আরো চারজন অবাঙ্গালীকে ছুরি দিয়ে হত্যা করেছো। এবং তুমি টেলিফোনের সাহয্যে ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ করেছো। এই সব কাজের জন্যই তুমি ভয়ে ডিউটি ছেড়ে পালিয়ে এসেছে। এই সময় কয়েকজন অবাঙ্গালী এই সব কথার উপর সাক্ষ্য প্রদান করে যারা আমরই অধীনস্থ কর্মচারী ছিল। এই সময় আমকে দিয়ে এই সমস্ত কথা স্বীকার করায় এবং আমাকে দিয়ে এই কথার উপর একটি লিখিত স্বীকারোক্তি আদায় করে দেয়। আমাকে পাবনাতে তিনদিন রাখে। এই সময় আমাকে একটা অন্ধকার কক্ষে বন্ধ করে রাখে এবং সময় সময় বের করে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় গাছের সঙ্গে উল্টোভাবে ঝুলিয়ে চাবুক মারত উল্টোভাবে। এখানে তিনদিন রাখার পর আমাকে নাটোর (রাজশাহী) জেলে স্থানান্তর করে। সেখানে ১৪ দিন রাখে। এই সময় আমাকে একই প্রক্রিয়ায় মারধর করে এবং পাক বাহিনীর বাঙ্কার করিয়ে নেয়। এখানে ১৪ দিন রাখার পর আমার নামে একটা চার্জশিট দিয়ে হেলিকপ্টার যোগে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে যায়। সেখানে আমাকে প্রথমে এমুনিশন এরিয়াতে রাখে। এই সময় আমাকে প্রত্যেক দিন ২ ঘন্টা করে কাজ করাত। এই কাজের মধ্যে ছিল মাটি কাটা, ঘাস কাটা, বাঙ্কার কাটা ইত্যাদি। এ ছাড়া যখন তখন যে সে এসে আমাকে ভীষণ ভাবে প্রহার করত। এক একজন আমকে এক এক রকম প্রশ্ন করত। আমাকে বলতো, “তোম লোক বাঙ্গালী হ্যায়, তোম লোক হিন্দু হ্যায়, তোম লোককা সর্দার মজিব ভি হিন্দু হ্যায়, ও হামারা পাছ হ্যায়, থোরি দের বাদ ঘর মে লাকে কাপড়া খোলকে দেখিয়ে।” এই সব কথা বলতো আর আমাকে মারধর করত। আমি দেখেছি যে এই অবস্থায় যদি কেউ মারা যেত তবুও তাকে মৃত অবস্থায় গড়াতে গড়াতে ওয়ালের পাশে নিয়ে যেত এবং উক্ত মৃত ব্যাক্তির লাশ মেশিনগানের গুলিতে ঝাঁঝরা করে দিত। এই সময় আমাকে এক বেলা খাবার দিত। পায়খানা প্রস্রাবের কোন জায়গা ছিল না যেখানে থাকা সেখানেই খাওয়া ও পায়খানা প্রস্রাব করতে হতো। সকাল বেলায় তা আমার সম্মুখে সিরাজগঞ্জের এসডিও জনাব শামসুদিন সাহেবকে মেরে ফেলা হয়। তাকে মাগরেবের দুই রাকাত নামাজ আদায় করার পর কুকুরেরা পিটিয়ে হত্যা করে।