পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/২১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Sbrఫి বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড l S$8 l বদিউজ্জামান খুলনা আমি ছেলেমেয়ে নিয়ে গ্রামের বাড়ী চলে যাই যশোর দখল হবার পর । টাকা-পয়সা, কাপড়-চোপড় কিছু না থাকায় ওখান থেকে ২৭শে এপ্রিল আমি শহরে আসি আমার বাসাতে কাপড়-চোপড় নেবার জন্য। ২৮শে এপ্রিল খুব ভোরে বাসা থেকে আমাকে পাকসেনারা ধরে নিয়ে যায়। লেঃ কঃ তোফায়েলের কাছে হাজির করে। জিজ্ঞাসাবাদ করে এক মেজর আমাকে যশোর সেনানিবাসে নিয়ে যায়। আমাকে এফ, আই, ইউ-র মেজর খোরশেদ ওমরের কাছে দেয়। একজন সিপাইকে বানাতে বলে। সঙ্গে সঙ্গে আমাকে শুইয়ে ফেলে লাঠি দিয়ে গরু পিটানো শুরু করে। আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। কিছুক্ষণ পরে জ্ঞান ফিরলে পা ধরে বারান্দায় টেনে এনে একজন সুবেদার কিল-চড়-ঘুষি যথেচ্ছা মারা শুরু করলো। আমি চিৎকার করতে থাকি। তারপর যেই আসুক না কেন লাথি কিল মারতে থাকে। বিকালে আমাকে টানতে টানতে একটি ঘরে রেখে আসলো। এর পর থেকে প্রত্যেহ সকাল বিকাল বের করতো এবং ভীষণভাবে মারতো। আমাকে জিজ্ঞাসা করতো এস, পি, ডি, কি বলেছেন, তুমি কি করেছ? না বললেই মারতো। সমস্ত শরীর দিয়ে রক্ত না ঝরা পর্যন্ত, জ্ঞান হারা না হওয়া পর্যন্ত মারধর করতো। আমি যেহেতু ইনটেলিজেন্স ব্রাঞ্চের অফিসার সেহেতু সব খবর জানি এই কথাই ধরে নিয়েছিল, তাই অত্যাচারের মাত্রা খুব বেশী ছিল। আমি পতাকা তুলে দিয়েছি সব খবর মুক্তিসেনাদের দিয়েছি ইত্যাদি। আমাকে ঐ ক্যাম্পে তিন মাস তিনদিন আটকে রাখে এবং প্রত্যহ মারধর করতে থাকে। আমাদের ছোট্ট একটি ঘরে অফিসার, দারোগা, অধ্যাপক, মাষ্টার , পুলিশ কৃষক শ্রমিক সবাইকে একত্র রাখতো। সারাদিন কোন খাবার দিত না, সন্ধ্যার আগে অল্প কিছু খাবার দিত। খুব ভোরে পায়খানা প্রস্রাব করাতে বের করতে নির্দিষ্ট সময়ের বেশী হলে ভীষণভাবে মারধর করতো, একসাথে ৩/৪ জনকে পায়খানা প্রস্রাব করাতে বসাতো, দেরী হলে মারধর করতো। সারাদিন রাতে একবার পায়খানা প্রস্রাব করাতো। সকালে আমাদের বের করিয়ে পায়খানা ধোয়াতো, ড্রেন পরিষ্কার, জঙ্গল পরিষ্কার মাল বওয়ানো অভুক্ত অবস্থায় করিয়ে নিতো। প্রস্রাব অনেকে ভিতরেই করে ফেলতো। মারের চোটে সারা শরীর ঘা হয়ে আসতো। আমরা ভালো করে বসতেও পারতাম না। সন্ধ্যার আগ দিয়ে সামান্য খাইয়ে ঘরে পুরে রাখতো। তিন মাস তিনদিন আমাকে গোছল করতে দেয়নি। ২রা মে ২৯ জনকে হাত, চোখ বেঁধে নিয়ে যায় সন্ধ্যাবেলা, বাকী থাকি অমি, একজন ড্রাইভারও একজন সি, ও পরে শুনলাম ওদের ট্রেন্স খুড়িয়ে নিয়ে গুলি করে হত্যা করেছে। ওর মধ্যে অনেক অধ্যাপকও ছলেন। তারপর থেকে প্রত্যহ রাত বারোটার পর ১০/১২ জন করে নিয়ে যেত আর ফিরতো না। প্রত্যেহ নতুন লোক এসে আবার ঘর ভরে যেতো।