পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/২২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Xእ»8 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড হোসেন (ডিভিশন হেডকোয়ার্টার যশোর ক্যান্টমেন্ট) তখন আমার পাশে। বিহারীরা আমাকে দেখে বিচার তাদের হাতে দেবার জন্য চীৎকার করতে থাকে, হঠাৎ তাদের মধ্যে থেকে এক বুড়ো বিহারী ড্রাইভার ভীড় ঠেলে মিলিটারী অফিসারদের সামনে এসে বলতে থাকে যে, সে প্রথমে আমাকে চিনতে পারেনি। কারণ আমার মাথা ন্যাড়া ছিল এবং মুখে দাঁড়ি ছিল। তবে যাবার সময় বলেছিল, “একে যদি তোমরা মারো তবে আল্লা বরদাস্ত করবে না।” তাই বোধহয় আমাকে আবার ক্যান্টমেন্টে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। কেস শুরু হোল। কোর্ট বসে যশোর শহরে। আমাদের নিয়ে যেতে সুবিধার জন্য সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে আমাকে যশোর সেন্ট্রাল জেলে বন্দী করে রাখে। এই জেলখানায় এসে আবার পি, আই, টি (পুলিশ ইনভেষ্টিগেশন টিম)-এর নির্মম কবলে পড়তে হয়। জেলখানা থেকে লোকদের নিয়ে যেয়ে ক্যান্টনমেন্টে তাদের ক্যাম্পে ভীষণ অত্যাচার করে নানা ধরনের তথ্য বের করতে চেষ্টা করে। এমনিভাবে জেলখানায় দিন মুখে কিছু কিছু শুনতে পেতাম। প্রায় সাত মাস বন্দী অবস্থায় ছিলাম, তাই প্রত্যক্ষভাবে আমি দেশের কাজ করতে পারিনি। কিন্তু মনে প্রাণে কামনা করেছি বাংলার স্বাধীনতা, আমি বিশ্বাস করতাম যে এত অত্যাচারের পতন হবেই। হয়তো আমি দেখতে পাবো না কিন্তু বাংলার স্বাধীনতার নতুন সূর্য একদিন উঠবেই। তাই যখন ৬ই ডিসেম্বর ক্যান্টনমেন্ট ফল করে এবং ৭ই ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনী আমাদের জেল গেট খুলে দিলে আমরা বেরিয়ে পড়ি। জেল থেকে বেরিয়ে মাটিতে প্রথম পদক্ষেপের আগেই আমার চোখ বেয়ে দু’ফোটা অশ্রু ঝরেছিল। স্বাক্ষর/আখতার হোসেন চৌধুরী ১১/৭/৭৩