পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/২২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Հoo বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড l めとと l শ্ৰী নরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় শষ্টিতলা, যশোর আমার বর্তমান বয়স ৯৮ বছর। ১৯৭১ সালের ৪ঠা এপ্রিলে সকাল ৮-৩০ মিনিটে ভারত ও তথাকথিত পাকিস্তানের খবর রেডিওর মাধ্যমে শুনছি এমন সময় দু’জন বিহারী ও তিনজন পাঞ্জাবী আমার বাসায় চলে আসে। বিহারী দুজন আমার পাড়া প্রতিবেশী। তারা আসার সাথে সাথে আমি রেডিও বন্ধ করে দেই। তারা সোজাসুজি আমার নিকট চলে আসে এবং আমাকে জিজ্ঞাসা করে তোমার টাকা পয়সা কোথায় ম্যানেজার ছিলাম। তারা সেই জন্য মনে করতো আমার নিকট প্রচুর টাকা পাওয়া যাবে। তারপর তাদের মধ্যে থেকে একজন মিলিটারী আমার পাশের ঘর হতে আমার চাকর কালিপদ দাসকে আমার নিকট নিয়ে আসে। তারপর আমাকে এবং তাকে ভয় দেখায় টাকা কোথায় রেখেছ? যদি না বলে দাও তা না হলে তোমাদের দু’জনকেই গুলি করে মারা হবে। আমরা জবাব দিলাম টাকা আমরা কোথায় পাবো। তখন আমাদের দু’জনকে পাশাপাশি দাঁড় করায়। তারপর একজন মিলিটারী কালিপদকে লক্ষ্য করে গুলি করে। সঙ্গে সঙ্গে তার বুক ভেদ করে গুলি বেরিয়ে যায়। তার পরক্ষণেই সে মারা যায়। তার পর আমাকে লক্ষ্য করে দ্বিতীয় গুলি ছোড়ে, গুলিটি আমার এক হাতে লাগে। গুলি লেগে আমার বাম হাতটা প্রায় শরীর হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তারপর আবার আরেকটা গুলি আমাকে করে। কিন্তু আল্লাহর অশেষ করুণায় গুলিটি আমার ডান হাতের এক পাশে লাগে। সাথে সাথে আমাকে আমনি ফেলে রেখে চলে যায়। বাড়ী হতে বের হয়ে যাবার সময় আমার বাসা লুটপাট করে বাসার সমস্ত কিছু নিয়ে যায়। অবশ্য উক্ত জিনিষপত্রগুলো মিলিটারীদের সঙ্গে যে দু’জন বিহারী এসেছিল তারাই লুটপাট করে নিয়ে যায়। আমি ঘরের মেঝেতে পড়ে থাকি। মিলিটারী ঐ দিনই আমার বাড়ীর পাশে পাশে ১১ জনকে গুলি করে মারে তার মধ্যে আমি শুধু বেঁচে আছি। যাদের গুলি করে মারা হল তারা হল আমার বাড়ীর উত্তরে আমার বিশিষ্ট বন্ধু অবসরপ্রাপ্ত ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেট রহমত উল্লাহ মণ্ডল এবং তার দুই শিক্ষিত পুত্র মোছাদেক ও জিন্নাহ এবং তার বাড়ীতে তিনজন ভাড়াটিয়া, একজন প্রফেসর ও দুজন শিক্ষিত ভদ্রলোক। আমার বাড়ীর উত্তরে ডাক্তার নাছির উদ্দিন খান এবং তার স্ত্রী ও তার বাড়ীতে উপস্থিত আরও তিনজন লোক। আমার বাড়ীর পূর্বে সত্য চরণ মিত্র ইত্যাদি ১২ জনকে গুলি করে তার মধ্যে ১১ জন মারা যায়। তার মধ্যে আমি পঙ্গু এবং অন্ধ অবস্থায় বেঁচে আছি। তারা চলে যাবার পর আমি আধমরা অবস্থায় পড়ে থাকি। সেইদিন বেলা তিনটার সময় দু’জন বিহারী এসে আমার ঘর হতে কালীপদের মরা লাশ নিয়ে যায়। তারপর ৭ দিন পর্যন্ত শুধু আমি শরীরে ভীষণ জুর নিয়ে না খেয়ে মেঝেতে পড়ে থাকি। ৭ দিন পর ঘোপের বদরউদ্দিন সাহেবের বাড়ী হতে মহর আলী নামক একজন লোক আমার জন্য দুধ ও রুটি নিয়ে আসে। তারপর হতে তার সেবা শুশ্রুষায় আমি সুস্থ হয়ে উঠি। আমার হাতে পোকা পড়ে গিয়েছিল। তারপর আমি সুস্থ হয়ে উঠি। বর্তমানে আমি অন্ধ এবং আমার বাম হাত পঙ্গু হয়ে গেছে। আমি এখনও খোদার অশেষ কৃপায় বেঁচে আছি আর কি। টিপ সহি/শ্ৰী নরেন্দ্ৰ নাথ চট্টোপাধ্যায় 〉b-○-q○