পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/২২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՋoՏ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড | აყუ ® | ডাঃ এস, এম, আহাদ আলী খান থানা- কোতোয়ালী যশোর এপ্রিলে পাকবাহিনী যশোর পুরোপুরি দখল করে নেয়। আমরা পালিয়ে যাই গ্রামে। সেখান থেকে ভারতে যাবার পথ না পেয়ে পুনরায় শহরে ফিরে আসি। জুলাই মাসের সতের তারিখে পাকসৈন্যরা আমার ডাক্তার খানা থেকে ধরে নিয়ে যায়। প্রথমে সার্কিট হাউসে নিয়ে গিয়ে ব্রিগেডিয়ারের সামনে হাজির করে। করাবার জন্য বসিয়ে রাখে। সেখানে সুবেদার মেজর আমীল হোসেন এবং একটি হাবিলদার ছিল নাম ইকবাল শাহ এবং আরও অনেকে ছিল। হঠাৎ করে অন্য সিপাই এসে আমাকে মারধর শুরু করে তখন সবাই মার আরম্ভ করে। আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। জ্ঞান ফিরলে আমি দেখি মেজর আনোয়ার হোসেন সামনে। মেজর আমাকে জিজ্ঞাসা করে তুমি কোন রাজনৈতিক দলে আছ? আমি উত্তর দিই ন্যাপে আছি। তারপর একটি ছোট্ট কামরাতে নিয়ে যায়, রাতে কোন খাবার এমনকি পানিও দেয়নি। প্রশ্রাব করতে চাইলেও মারধর করেছে তারপর দিন সুবেদার ইকবাল শাহ আমাকে বলে, যেহেতু মেজর খুরশীদ আনোয়ারের মেয়েকে এক সময় চিকিৎসা করে বাঁচিয়েছি সেহেতু আমকে নাকি মেরে ফেলা হবে না। ওকে আমি পানির জন্য অনুরোধ করি কিন্তু পানি দেয়নি। সন্ধ্যাবেলা আউন্স দুই পানি এবং একমুঠি পচা ভাত দেয়। জুলাই মাসের ২০ তারিখে আবার মেজর সাহেবের সামনে নিয়ে যায়। সেখানে আমকে জিজ্ঞাসা করে যখন বাঙ্গালী সৈন্যরা আমাদের সাথে যুদ্ধ করে তখন ওরা কি খেত? আমি উত্তর দেই ছোলা, অমনি সবাই মিলে মারধোর শুরু করে। দুধ, ডাব, ভাত পাঠিয়েছি কিনা জিজ্ঞাসা করে। আমি হ্যাঁ বলেছিলাম কারণ তখন আমি দেখলাম পাকসৈন্যরা সব খবরই সংগ্রহ করেছে। জুলাই মাসের ৩১ তারিখ পর্যন্ত সিপাইরা দুবেলা মারধর নিয়মিত করতো। পাঁচ মিনিট সময় দিত তার মধ্যে প্রশ্রাব, পায়খানা, হাতমুখ ধোওয়া সব করতে হতো, দেরী হলে বেত মারতো। সারাদিন খাবার দিত না, সন্ধ্যাবেলা কিছু পচা ভাত এবং আউন্স দুই পানি দিত। পানি চাইলে বলতো তোমরা আমাদের পানি বন্ধ করেছিলে। ১লা আগষ্ট আবার মেজর আমাকে এক প্যাকেট বিস্কুট দেয়। কোর্ট থেকে নামিয়ে নিয়ে এসে সুবেদার মেজর আমীর হোসেন আমাকে ভীষণভাবে মারধর শুরু করে। আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। আমার আর চলবার ক্ষমতা ছিল না। তখন থেকে কিছু কিছু খাবার দিত। সিপাইরা মারধর করতো নিয়মিতভাবে মফিজ চৌধুরী, নড়াইলের অধ্যক্ষ মোয়াজ্জেম হোসেন, ডাঃ মাহবুবুর রহমান এবং আজিজুর হক, এ, বি, এম, বদরুল আলম এরা সবাই আমার সাথে ছিলো। পুরা আগষ্ট মাস প্রায় আমি অজ্ঞান থাকতাম। আগষ্ট মাসে আমার মেয়ে শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান সাহেবের কাছে অনুরোধ করে আমার মুক্তির জন্য কিন্তু কোন কাজ হয়নি এবং অপমানিতা হয়েছে। উপর থেকে কি অর্ডার আসে জানিনা তারপর আমাকে মুক্তি দেয়। যখন মুক্তি দেয় তখন আমার জ্ঞান ছিল না। রাতে সাড়ে আটটার সময় প্রত্যহ ধৃত লোকদের মুখে কালো কাপড় দিয়ে বেঁধে বাইরে নিয়ে যেত। শুনতাম অবাঙ্গালীরা ছুরি দিয়ে জবেহ করেছে। ধরে নিয়ে এসে পিটিয়ে হত্যা করেছে। উপরে পা ঝুলিয়ে মাথা নিচু করে মারতে মারতে মেরে ফেলতো। গুহ্যদ্বারের ভিতর বেয়োনেট ঢুকিয়ে দিত খবরাখবর না দেওয়ার জন্য বরফ ঢুকিয়ে দিত। বাগাছাড়া হাইস্কুলের শারীরিক শিক্ষককে ধরে নিয়ে গিয়ে খবর না দেওয়ার জন্য অত্যাচার শুরু করে। বিছানার উপর শুইয়ে একটি কেমন যন্ত্র দিয়ে চাপ দিত তারপর ইলেকট্রিক শক দিত, উপরে ঝুলিয়ে মারধর করতো।