পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/২৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২০৫ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড |l აყუპა | শ্রী গণপতি সরকার কোতোয়ালী, যশোর ১৯৭১ সালের ২৭শে মার্চ আমি আধুনিক সেলুনে কাজ করছিলাম। বেলা ১১টার সময় ৪ জন পাক সেনা আধুনিক সেলুনে চলে আসে এবং আমাকে শ্রী অজীৎ ভবেন ও জগদীশকে কোন কথা জিজ্ঞাসা না করে ধরে ফেলে এবং সবাইকে কালেক্টরেটে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে গিয়ে আমাকে ছাড়া বাকি তিনজনকে রাইফেল, বেতের লাঠি ও বুট দিয়ে গুতা, প্রহার আর লাথির পর লাথি মারতে থাকে। তাদের এইভাবে বেলা তারপর আমার বাড়ী গিয়ে আমার বড় ভাইকে খোঁজ করে কিন্তু তাঁকে বাড়ী না পেয়ে ঘরের মধ্যে শেখ সাহেবের যে ফোটো ছিল তা ভেঙ্গে ফেলে এবং পরে ওতে আগুন ধরিয়ে দেয়। আমার বড় ভাই শ্রী পশুপতি সরকার আওয়ামী লীগ করতেন। তারপর আমাকে বাড়ী হতে শহরে নিয়ে আসার সময় একজন বেলুচ মিলিটারী আমাকে মুড়ি ও গুড় কিনে দেয় খাবার জন্য। আমি মুড়ি মুখে দিতেই একজন পাঞ্জাবী মিলিটারী লাথি দিয়ে তা আমার মুখ হতে ফেলে দেয় এবং অকথ্য ভাষায় আমাকে গালাগালি দেয়। তারপর আমাকে কালেক্টরেটে নিয়ে আসে। সেখান হতে তাদের গাড়ীতে করে আমাকে ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে যায়। সেখানে গাড়ী হতে নামিয়ে মর্শাল ল কোটে নিয়ে হাজির করে। তারপর কর্ণেল আমাকে জিজ্ঞেস করে তোমার নিকট নাকি ওয়ারলেস পাওয়া গেছে? আমি অস্বীকার করি। তারপর আমাকে একটা ঘরে নিয়ে যায় এবং সেখানে হাওলাদার আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তোর ভাই কোথায় আমাদেরকে বলে দিবি আর না হয় স্বীকার করবি যে আমার নিকট ওয়ারলেস পাওয়া গেছে। কিন্তু আমি কোন কথাতেই রাজি না হবার দরুন আমার পাছায় এবং পিঠে ২৫টা বেত মারে এবং আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। প্রায় ঘন্টাখানেকের মধ্যে আবার জ্ঞান ফিরে পাই। তারপর প্রায় ৪০ জনকে মারতে মারতে কোয়াটার গার্ডে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে গিয়ে আবার বেতের ছড়ি দিয়ে মারতে মারতে গাড়ি হতে নামায়। গাড়ি হতে নামিয়ে রৌদ্রের মধ্যে চিত করে শুইয়ে রাখে। তারপর বুকের উপর উঠে বুট দিয়ে খচতে থাকে। এই ভাবে বেলা ১১টা হতে বিকাল তিনটা পর্যন্ত রৌদ্রের মধ্যে গার্ডে নিয়ে এসে রেখে দেয়। এই ভাবে প্রত্যেকদিন অত্যাচার করার দরুণ দ্বিতীয় দিন বুটের খচনের সঙ্গে সঙ্গে তিন জন আমির, লতিফ ও গৌর নামক তিন ব্যাক্তি মারা যায়। তিন দিন পর পর এক বেলা খাবার দিত। আর পানি চাইলে প্রস্রাব করে নিয়ে এসে দিত। পায়খানা করতে চাইলে মার আরম্ভ করে দিত। এইভাবে ৬ই এপ্রিল পর্যন্ত আমাদের উপর একই উপায়ে অত্যাচার করার পর ৭ই এপ্রিল মেজর আমাদেরকে ডাকে। আমরা ৩৫ জন মেজরের নিকট হাজির হই। মেজর সবার ষ্টেটমেন্ট নেবার পর আমাকে জিজ্ঞাসা করে তা হলে তোমাকে কোন অপরাধে ধরে নিয়ে আসে। আমি প্রতি উত্তরে বলি স্যার আমি একজন বারবার, আমি, ওয়ারলেস চিনি না। আমার বড় ভাই আওয়ামী লীগ করেন। তাকে বাসায় না পেয়ে আমাকে ধরে আনে। তারপর মেজর চারজনকে রেখে ৩১ জনকে ছেড়ে দেয়। যে চারজনকে রেখে দেয় তারা হলো অরুণ, অমলা সোম, কেষ্ট এবং আর একজন নাম না জানা। ওদের চার জনকে কারেন্ট চার্জের জন্য নিয়ে যায়। তারা ফিরে আসে না। তারপর আমি ৭ই এপ্রিল উক্ত ৩১ জনের সঙ্গে ক্যান্টনমেন্ট হতে মুক্তি পেয়ে বাড়ী চলে আসি। সাক্ষর/শ্ৰী গণপতি সরকার ১৬/৩/৭৩