পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/২৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՀՖbr বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড |լ Ֆ Գ է լ অনিল কুমার মণ্ডল ডাকঘর-পাজিয়া জেলা-যশোর ১৯৭১ সালের ৩ শে জুন, শনিবার সকাল ৭টার দিকে ৫ জনের একটা পাক সেনার দল আমাকে নিজ বাড়ী হতে ধরে ফেলে। উক্ত দিন প্রায় ৫০/৫২ থানা মিলিটারী গাড়ী পাজিয়া গ্রাম ঘিরে ফেলে। সকালে তারা গ্রামের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। পাক সেনারা প্রথম ধরে জিজ্ঞাসা করে যে, আমি হিন্দু না মুসলমান। আমি নিজেকে হিন্দু বলে প্রকাশ করায় আমার উপর রাইফেলের বট দিয়ে আঘাত করে। এবং উক্ত গ্রামের শ্রী রবি কুমার বাবু কোথায় আছেন তা জানতে চায় এবং আমাকেও মুক্তিফৌজের সাহয্যকারী বলে চিহ্নিত করে। উক্ত স্থান হতে শ্রী রবি পাক মেজর তখন বলে যে, তুমি মুক্তিফৌজ কিনা? তুমি ভারতে যাতায়াত করো কিনা? কিন্তু আমি অস্বীকার করি এবং বলি যে, আমি স্কুলে শিক্ষকতা করি এবং দৈনিক হাজিরা খাতায় উপস্থিত আছে সুতরাং উক্ত অভিযোগ মিথ্যা। একথা বলার পর একটা কাঠের লাঠি দিয়ে ভীষণভাবে আঘাত করে ফলে আমার হাত দিয়ে প্রচুর রক্তপাত হয়। তারপর আমাকে ওখানে বসিয়ে রাখে। সেইখানে নারায়ণ প্রসাদ চক্রবর্তীকে বসিয়ে পিঠে লাঠি দিয়ে বেদম প্রহার করতে থাকলে সে বিকট চিৎকার করতে থাকে। তখন এক জন বাঙ্গালী এস মেজরকে সংবাদ দেয় যে এক জন বাঙ্গালী বধুকে পাক সেনারা ধরে নিয়ে গিয়ে পাশবিক অত্যাচার করছে। এই সংবাদে মেজর আমাদের বসিয়ে রেখে চলে যায়। তখন আমাদের ধরে অন্য ঘরে নিয়ে যায়। আমাদের অন্য ঘরে নিয়ে যাওয়ার জন্য নির্দেশ করে তৎকালীন পাকিস্তানের ২ জন দালাল। ঐ ঘরে গিয়ে দেখি যে রামচন্দ্র বিশ্বাস নামে একজন লোককে বেদম আমাকে ও নারায়নকে উক্ত ঘরে নিয়ে গিয়ে এক সেনার লাঠি, রাইফেলের বট, বুট জুতা ও ঘুষি দিয়ে বিভিন্ন উপায়ে বেদম প্রহার করলো। এই ভাবে দিন ৮-৩০ হতে বিকাল ৩টা পর্যন্ত বিভিন্ন পাক সেনা পর্যায়ক্রমে প্রহার করে। এইভাবে প্রহার করার পর আমাদের শরীর দিয়ে রক্ত ঝরতে থাকে। তখন তারা প্রহার বন্ধ করে নির্দেশ দেয় যে, তিন জন বাঙ্গালী একে অপরের বিরুদ্ধে প্রহার শুরু করো। সেই নির্দেশ মতো আমাদের তিনজনের হাতে তিনটি লাঠি দিয়ে দেয় এবং বলে যে, এই লাঠি দিয়ে যদি একে অন্যকে প্রহার না হই। এই ভাবে প্রায় এক ঘণ্টা নিজেরা মারামারি করি। তখন পাক সেনারা এই মারামারি উপভোগ করতে থাকে এবং আনন্দ উল্লাস করতে থাকে। নানাভাবে এই সংঘর্ষকে উৎসাহ দিতে থাকে। এইভাবে নিজেরা মারামারি করে প্রায় জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ি। পাক সেনারা আমাকে আট স্থানে বেয়নেট চার্জ করে। বাকী দু’জনকেও ঐ একই ভাবে বেয়নেট চার্জ করে। রামের ঘাড়ে বেয়নেট দিয়ে প্রায় দুই ইঞ্চি মতো ক্ষত করে। তখন আমরা মৃতের মতো পড়ে থাকি এবং নড়াচড়া হতে বিরত থাকি। সেই সময় আমাদের শরীর হতে রক্তক্ষরণের ফলে দেহ অসাড় হয়ে আসতে থাকে। তখন পাক সেনারা মৃত মনে করে আমাদের উপর লেপ তোষক দিয়ে ঢেকে দেয়। লেপের উপর তখন বিভিন্ন ধরনের কাঠ চাপ দেয়। আমরা তখন জীবিত অবস্থায় মৃতের মতো শুয়ে থাকি। আমাদের উপর চাপানো