পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/২৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২২৪ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড |լ Ֆb-8 |լ বিকাশ চন্দ্র মল্লিক মনিরামপুর যশোর আমি, সিদ্দিক, ও ইউনুস এই তিনজন পাক সেনাদের হাতে বন্দি হই। তারা আমাদেরকে ঝিকরগাছা নিয়ে যায়। ঝিকগাছা নিয়ে যাবার পথে আমাদেরকে বন্দুকের বট দিয়ে ভীষণ প্রহার করতে থাকে। ঝিকরগাছা হতে চোখ বেঁধে গাড়ীতে করে সারসা তাদের ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেয়। সেখানে একটা ঘরের মধ্যে দু’ফুট পানি ছিল। সেখানে দু’হাত পিছনের দিকে রশি দিয়ে বেঁধে একটা জানালার শিকের সাথে বেঁধে রাখে। রাত শেষে আবার সেখান হতে বাইরে নিয়ে গিয়ে ছড়ি দিয়ে, বেয়নেট দিয়ে, বুট দিয়ে, লাঠি দিয়ে, ভীষণ প্রহার, চড়, ঘুষি, লাথি, দিয়ে ৪/৫ জন মারতে থাকে আর জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকে কোথায় পার্টি আছে? কোন কোন এলাকায় অপারেশন করেছ? কোথায় ট্রেনিং নিয়েছ? কয়জন পাক সেনা মেরেছ? ভারতে কার নেতৃত্বে ট্রেনিং নিয়েছ? তুমি ভারতীয় ক্যাপ্টেন না মেজর ইত্যাদী বলতো আর অকথ্য ভাষায় গালি দিত ও প্রহার করত। জ্ঞান হারিয়ে ফেললে প্রহার করা বাদ দিত। জ্ঞান ফিরে পেয়ে দেখতে পেতাম আমার মাথায় পানি। এইভাবে দুদিন দুরাত আমার উপর অমানুষিক নির্যাতন চালানোর পর ১১ই অক্টোবর আমাকে যশোর ক্যান্টনমেন্টে পাঠিয়ে দেয়। সেখানে দুদিন থাকার পর মেজর আমার ষ্টেটমেন্ট নেয়। মেজর আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকে তুমি যুদ্ধ করতে এসে অন্যায় করেছ, না ঠিক করেছ? তার জবাবে আমি বলি, মাবোনদের ইজ্জত রক্ষার্থে ও মাতৃভূমির স্বাধীনতার জন্য অস্ত্র ধরলে যদি অপরাধ হয় তা হলে আমি অন্যায় করেছি। ঐ কথা বলার পর মেজর আমার প্রহার করা বন্ধ করে দেয়। পুনরায় আমাকে হাজত ঘরে পাঠিয়ে দেয়। পুনরায় আমাকে হাজত ঘরে পাঠিয়ে দেয়। এর তিন দিন পর এক বিহারী আমাকে গোপনে হাজত হতে বের করে গুলি করতে নিয়ে যায়। গুলি করার আগে মেজর জানতে পেরে আমার নিকট চলে যায় এবং আমাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসে আর বিহারীকে অশ্রিল ভাষায় গালি দেয়। সেই দিন অর্থাৎ ১৭ই অক্টোবর আমাকে ছেড়ে দিবে বলে মেজর দুজন সেন্ট্রিসহ আমাকে যশোর শহরে নিয়ে আসে এবং সেন্ট্রাল জেলে রেখে আসামির শরীর হতে এক পাউণ্ড থেকে দু’পাউণ্ড পর্যন্ত রক্ত জোর পূর্বক নিয়েছে। রক্ত না দিলে ভীষন প্রহার করতো। ৭ই ডিসেম্বর আমরা যশোর জেলখানা হতে মুক্তি পাই। মনিরামপুর থানা ৭ই ডিসেম্বর শত্রমুক্ত হয়। ৮ই ডিসেম্বর আমি, রতন, আখতার এই তিন জন মনিরামপুর থানায় চলে আসি এবং ও, সি.-এর নিকট হতে রাজাকারদের রেকর্ডপত্র নিয়ে নেই। তারপর আমরা মিনরামপুরে ঘোষনা করে দেই যাদের নিকট অস্ত্রশস্ত্র আছে, তারা ৪/৫ দিনের মধ্যে মুক্তিফৌজ অফিসে জমা দাও। তাদেরকে কিছু বলা হবে না। ঘোষনা করার কয় দিনের মধ্যেই ৩০০/৪০০ রাইফেল আমাদের অফিসে জমা হয়ে যায়। ডিসেম্বরের শেষের দিকে ক্যাপ্টেন সফিউল্লা ই,পি,আরদেরকে সঙ্গে করে মনিরামপুর চলে আসেন আমরা তাঁর হাতে আমাদের উদ্ধার করা অস্ত্রশস্ত্র তুলে দেই। তারপর বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ঢাকা গিয়ে আমাদের অস্ত্রশস্ত্র তাঁর নিকট জমা দিয়ে আসি। স্বাক্ষর/বিকাশ চন্দ্র মল্লিক ২/৪/৭৩