পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/২৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২২৫ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড |լ Ֆb-( լ মোঃ আব্দুস সাত্তার গ্রাম-কবুর হাট ডাকঘর-জগতী থানা ও জেলা-কুষ্টিয়া ১২-৬-৭১ সালে বিকাল তিনটার সময় দু’জন পাক দালাল অস্ত্রশস্ত্রসহ কবুর হাটে আমার দোকানে এসে জিজ্ঞেস করে সিরাজ মিঞা কোথায়। আমি উত্তর করি তা তো বলতে পারবো না। তারপর আমাকে বলে তোমাকে আমাদের সঙ্গে যেতে হবে। কারণ মেজর সাহেব তোমাকে ডেকেছে। আমি তাদের সঙ্গে যেতে গারার ব্রীজ, যেখানে মিলিটারী পাহারা দিত, পৌছিবার সঙ্গে সঙ্গে একজন মিলিটারী আমার নিকট চলে আসে এবং আমাকে জিজ্ঞেস করে, ভোট দিয়েছ কোথায়? আমি উত্তর করি নৌকায় দিয়েছি। অমনি আমার গালের উপর তিন-চারটা চড় কসে মারে। আমি মাটিতে পড়ে যাই। তারপর আমাকে কুষ্টিয়া পুলিশ লাইনে নিয়ে গেলে একজন মেজর এসে আমাকে জিজ্ঞেস করে তোমার বাড়ীতে কয়টা বন্দুক আছে? আমি বলি আমার বাড়িতে কোন বন্দুক নাই। আমি বন্দুক দিয়ে কি করবো। আমি বন্দুকের কথা অস্বীকার করাতে আমাকে মেজরের নির্দেশে একটা ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই ঘরে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রায় ১৫/২০ জন মিলিটারী এসে আমাকে ঘরে নিয়ে কেউ ঘুসি, কেউ লাথি, কেউ বুট দিয়ে খচন আবার কেউ বা বেতের লাঠি দিয়ে বেদম প্রহার করতে থাকে এবং পরস্পর হাসতে থাকে। এইভাবে প্রায় ১৫ মিনিট শারীরিক অত্যাচারের পর আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। প্রায় আধা ঘণ্টা পর আবার জ্ঞান ফিরে পাই। তারপর আমাকে একটা অন্ধকার কোঠায় নিয়ে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। আমি সেখানে গিয়ে পাই আমার মত তিনটি লোক সেই ঘরের মধ্যে অর্ধমৃত অবস্থায় পড়ে আছে। বিকেল পাঁচটার সময় আবার একজন মিলিটারী এসে আমাকে সেখান হতে বের করে একটা বড় ঘরের মধ্যে নিয়ে যায় এবং মাটিতে উপুড় করে শোয়ায়ে দেয় তারপর একজন ঘাড়ের উপর এসে চড়ে। দুজন দুহাত পাড়া দিয়ে ধরে। দুজন দুপায়ের উপর চড়ে, আর ৪/৫ জন বুট পায়ে দিয়ে খচতে থাকে তারপর আমী অজ্ঞান হয়ে যাই। ১৫/২০ মিনিট পর জ্ঞান ফিরলে আবার বন্ধ করে রেখে দেয়। এইভাবে ৪/৫ দিন নিয়মিত শারীরিক নির্যাতন চালানোর পর একজন ক্যাপ্টেন এসে আমাদেরকে বন্ধ ঘরে দেখে যায় এবং একজন মিলিটারীকে জিজ্ঞাসা করে এদেরকে খাবার দেওয়া হয়েছে? মিলিটারটা উত্তর করে, না। তখন নির্দেশ দেয়, তাড়াতাড়ী এদের জন্য খাবার নিয়ে এসো। এই বলে ক্যাপ্টেন চলে যায়। মিলিটারীটা আমাদের জন্য খাবার আনে। আমার উক্ত খাবার না খেয়ে উহা ফেরত দেই। ঐ মাসের ১৫ তারিখে ক্যাপ্টেন আমাকে থানা হাজতে পাঠায়। এবং ২০ তারিখে, ক্যাপ্টেন কুষ্টিয়া হতে বদলী হয়ে যাবার সময় থানার ও,সি,কে বলে যায়, ছাত্তার নামক লোকটা সম্বন্ধে ভাল করে খোঁজখবর নেবে। এই লোক যদি দোষী না হয় তাহলে একে মুক্ত করে দেবেন। তারপরও ও.সি.-এর নির্দেশে আমাকে ২১ তারিখে থানায় হাজির করা হয়। ও,সি আমাকে জিজ্ঞেস করে তোমার বাড়ী কোথায়, নাম কি, ইত্যাদী। তারপর ও সি-এর নির্দেশে আমাকে জেলে নিয়ে রাখা হয়। সেখানে জেলের ভিতর বিহারীরা আমাকে ৩/৪ দিন পরপর মারধর করতো। এই ভাবে জেলের মধ্যে তারপর বাড়ী চলে আসি। মামলা চলতে থাকে। ৪/৫ তারিখ মামলা চলার পর মহকুমা হাকিম আমাকে বেকসুর খালাস দেয়। স্বাক্ষর/আব্দুস সাত্তার (বয়াতী)