পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/২৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Հ8(։ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড | సిసి | আফতাব উদ্দীন আহমদ থানা- পিরোজপুর ৪ঠা মে পিরোজপুর শহরে পাক বাহিনী প্রবেশ করে। পাক বাহিনী বরিশাল থেকে হুলার হাট হয়ে পিরোজপুর প্রবেশ করে। মিলিটারী তিন দিক থেকে পিরোজ পুর শহর আক্রমণ করে। ৫ই মে পাক বাহিনী আমার বাড়ী ধ্বংস করে। প্রথমে লুটতরাজ চালায়। তারপর অগ্নিসংযোগ বাড়ী জুলিয়ে দেয়। এই দিনই পাক বাহিনী পিরোজপুর সেকেণ্ড অফিসার, এসডিপিও ট্রেজারী অফিসারকে গুলি করে হত্যা করে। অনুভব করি। ভাণ্ডারিয়ায় আমার নিজ বাড়ী ছেড়ে আমি আমার শ্বশুরবাড়ী বরগুনা (পটুয়াখালী) চলে যাই। এখানে আমি প্রায় দেড় মাস কাল অতিবাহিত করি। তারপর আমি খুব অসুস্থ হয়ে পড়ি। শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান সাহেব আমার কাছে চিঠি দেন এবং বলেন যে আমি ক্যাপ্টেন এজাজ সাহেবের সঙ্গে আপনার ব্যাপারে আলাপ করেছি, কাজেই আপনি এখানে আসতে পারেন। শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান সাহেবের চিঠি পাবার পর পিরোজপুর চলে আসি এবং চেয়ারম্যান সাহেবের সঙ্গে দেখা করি। তিনি আমাকে গোপনে থাকতে বলে। তিন দিন পর চেয়ারম্যান সাহেব আমাকে ডেকে পাঠান এবং ক্যাপ্টেন এজাজের কাছে নিয়ে যান। ক্যাপ্টেন এজাজ সাহেবের কাছে আমি এই সময় একটা দরখাস্ত দেই যে আমার ছেলে “ক্যাপ্টেন জিয়া” আমার বাধ্য নয়, সে আমার অমতে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছে। আমি শহরে আসার ৭/৮ দিন পর জানলাম পাক বাহিনীর ক্যাপ্টেন এজাজের কাছে আমার নামে বলা হয়েছে যে, তার ছেলে প্রত্যেক দিন রাত্রিতে মুক্তিবাহিনী নিয়ে এসে তার সঙ্গে দেখা করে যায়। এরপর প্রায় ১০০ মিলিটারী নিয়ে আমার বাড়ি আক্রমণ করা হয়। আমার বাড়িতে এসে পাক বাহিনী আমার বুকের উপর, আমার স্ত্রীর বুকের উপর এবং আমার ছেলের বুকের উপর রাইফেল ধরে। এই সময় পাক বাহিনী আমাদের ঘেরাও করে যে তোমার ছেলে ক্যাপ্টেন জিয়া তোমার ঘরে আছে, তুমি তাকে বের করে দাও। আমি তার উত্তরে বলি যে আমার ছেলে বাড়ীতে নাই, তোমরা ইচ্ছা করলে আমার ঘর সার্চ করে দেখতে পারো। তখন আমার ঘর সার্চ করে তারা চলে যায়। পাক বাহিনী সব সময়ই নারী ধর্ষণ করেছে। তারা রাজাকার দিয়ে গ্রাম থেকে সুন্দরী যুবতী মেয়েদেরকে ধরে আনতো। অনেক সময় তারা নিজেরাও কোন কোন বাড়ীর উপর চড়াও হতো এবং মেয়েদেরকে ধরে নিয়ে যেত। পাক বাহিনী বিশেষ করে আওয়ামী লীগ, মুক্তিবাহিনী ও হিন্দু এদের খোঁজ বেশী করেছে এবং যাদের সন্দেহ হয়েছে তাদেরকেই মেরে ফেলেছে। এমন কোনো রাত ছিল না যে পাক বাহিনী পিরোজপুর জেট ঘাটে ৫০ থেকে ১০০ জন লোকেকে হত্যা না করতো। শেষের দিকে নদীর ভিতর শুধু মৃত লাশ ভাসতে দেখা যেত। আমার মনে হয় একমাত্র বলেশ্বর নদীর জেটি ঘাটেই ৪/৫ হাজার লোককে পাক জল্লাদরা নির্মমভাবে হত্যা করেছে। পাক ক্যাপ্টেনের একমাত্র কথাই ছিল "জেটিমে ভেজ দেও।”