পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/২৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৫৪ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড ৮ মাসের গর্ভবতী একটি মেয়ের উপর পাক বাহিনী এই সময় অমানুষিক পাশবিক অত্যাচার চালায় যার দরুন সন্তান প্রসব করার পর সে ও সন্তান মারা যায়। ২৫ শে শ্রাবণ পাক বাহিনী দালালের সহযোগিতায় ঝালকাঠি থেকে গান বোট নিয়ে শঙ্কর ধবল গ্রামে আসে এবং আছমত আলী ও রহিনী মিস্ত্রিকে ধরে নিয়ে শশীদ গ্রামে আসে এবং সুনিল সরকার নামে এক ছেলেকে গুলি করে হত্যা করে। এই সময় খুব বৃষ্টি নেমে পড়ে। পাক বাহিনী তখন রহিনী কুমার মণ্ডলের ঘরে আশ্রয় নেয়। এবং হারমোনিয়াম, ঢোল, তবলা নিয়ে খুব গান বাজনা করে এবং কলা খায়। বৃষ্টি শেষে যাবার সময় গৃহকর্তা রহিনী কুমার মণ্ডলকে গুলি করে হত্যা করে যায়। যে দুইজন লোককে তারা বন্দি করে আনে তাদের একজনকে টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয় এবং একজনকে শশীদ হাটে বসে গুলি করে হত্যা করে। তাকে হত্যা করার আগে খুব মারপিট করে এবং গালাগালি দেয়। যাকে এই সময় ছেড়ে দেয় তাকে বলে দেয় তোমরা জয়বাংলা বলতে পারবে না। বলবে “জয় পাকিস্তান ”। জামুয়া, জেসার, গণপতিকাঠি, আরামকাঠি প্রভৃতি গ্রাম জুলিয়ে দেয়। এই সময় বহু লোককে তারা নির্মমভাবে হত্যা করে। এই সময় মাদ্রা গ্রাম থেকে দুইজন লোককে কুঠার দিয়ে কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। তাদের অপরাধ ছিল পাক সৈন্য যখন একটা মেয়েকে ধর্ষণ করার জন্য যায় তখন তারা দুইজন বাধা দেয়। এই সময় তারা বহু মেয়েকে ধর্ষণ করে। একমাত্র স্বরূপকাঠি থানাতেই ১ হাজারের বেশী মেয়েকে পাক বাহিনী ধর্ষণ করেছে। বিভিন্ন সময় আমাদের থানাতে প্রায় ২০০/৩০০ লোককে পাক বাহিনী হত্যা করে। স্বাধীনতার পর আটঘর কুড়িয়ানা স্কুল ঘরের পিছনে একটা পুকুরের ভিতর থেকে ১৫৬ টা মাথার খুলি উদ্ধার করা হয়। পাক বাহিনী স্বরূপকাঠি দখল করার পর স্বরূপকাঠি, কুড়িয়ানা, শশীদ, বাউকাঠি জলাবাড়ী এই সব জায়গায় ক্যাম্প স্থাপন করে এবং এখান থেকেই বিভিন্ন জায়গায় অপারেশন চালায়। জলাবাড়ী ক্যাম্প অঞ্চলে ৩৩টা গ্রাম শুধু হিন্দু বসতি ছিল, পাক বাহিনী সব গ্রাম একেবারে নিশ্চিহ্ন করে দেয়। স্বাক্ষর/যতিন্দ্ৰ নাথ মণ্ডল