পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/২৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨૭૭ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড l SSC: ll শ্ৰী বিমল কৃষ্ণ দাস ভোলা জনস্বাস্থ্য কেন্দ্র ভোলা, বরিশাল ২৮শে মে রাজাকাররা রাত ১২টার দিকে আমাদের গ্রামের বাড়ী ঘিরে ফেলে। লোকজন দেখে ভাবলাম গ্রামে পাহারা দেয় তারাই হয়তো আসছে। দারোগা এসেই আমার নাম জিজ্ঞাসা করে। নাম বলার সাথে সাথে আমাকে আটকাতে বলে। রাজাকারদের মধ্যে একজন আমাদের পরিচিত এবং ২ জন আমার মুক্তিবাহিনীকে সাহায্য করছো। আমার দাদা বিজয় ভূষণ দাস (২) আমি (৩) ব্রজমোহন দাস (জ্যাঠা) (৪) হরিপদ দাস (কাকা) (৫) সুনীল কুমার দাস (খুড়তুতো ভাই) (৬) সহদেব হালদার (কৃষাণ বাড়ীর) (৭) যোগেন্দ্র বৈদ্য (৮) শ্যামল কৃষ্ণ দাস (৯) সেয়দ আহম্মদ (১০) রুহুল আমীন (১১) ইনা আলী। দারোগা সবাইকে থানায় নিয়ে যায়। পথে বালক বলে শ্যামল কৃষ্ণ দাস, রুহুল আমীন এবং ইনা আলীকে ছেড়ে দিয়ে আমাদের ৮ জনকে থানায় নিয়ে আসে। পথে জনৈক রাজাকার বলে তোমার জ্যাঠাতো বোনকে দিলে সবাইকে বাঁচিয়ে দেওয়া হবে। আমি অস্বীকার করলে আমার জ্যাঠাকে বলে। জ্যাঠা মহাশয় বলেন, “আমার জীবনের বিনিময়ে হলেও মেয়ের ইজ্জত দিতে পারবো না, টাকা নিতে পারো। রাজাকাররা ক্ষিপ্ত হয়ে সবাইকে হাজতে আটকে রাখে। ২৯শে মে সকালে রাজাকার আবার এসে আমার বোনকে চায়। আমি অস্বিকার করি। রাজাকার ফিরে যায়। আমার বৃদ্ধ আর এক জ্যাঠা দারোগাকে ছেড়ে দেবার অনুরোধ করলে সে বলে, ক্যাপ্টেন বরিশাল থেকে ফিরলে তখন দেখা যাবে। ক্যাপ্টেন ছিল কায়ানী। ২৯শে মে ভোলা ডাক বাংলাতে শান্তি কমিটির সভা বসে আমাদের নিয়ে। বরিশাল থেকেও জেলা শান্তি কমিটির লোক আসে আমাদের বিষয়ে। বরিশালে শান্তি কমিটির পুরাতন অনেকেই আমার বড় জ্যাঠাকে চিনতো। তারা এসে ছেড়ে দেবার জন্য অনুরোধ করে। আমি একটু আশ্বাস পেলাম হয়তো বাঁচবো। ৩০শে মে সকাল ১০ টার দিকে ক্যাপ্টেন নিজে ১০/১২ জন খান সেনা নিয়ে আমাদের দেখতে যায়। আমার ভাইপো ৭/৮ বছর বয়স, ক্যাপ্টেনের পা ধরে খুব কান্নাকাটি করলে ক্যাপ্টেন বলে আচ্ছা ছেড়ে দেবো। আমাদের শিবপুর ইউনিয়ন শান্তি কমিটির সেক্রেটারী ইলিয়াস মাষ্টারকে আমাদের পক্ষে সুপারিশ করতে নিষেধ করে। আমার জ্যাঠা ডাঃ শশী ভূষণ দাস দারোগাকে ৫০০০ টাকা দিতে রাজী হলে সে বলে, ‘কালকে আসবেন’। পাক কর্তৃপক্ষ একটি ব্যাজ দেন (সি, এস)৷ এই ব্যাজ কমন সারভেন্ট, সাধারণ কৃষক, মুচি, মেথর, নাপিত এদের দেওয়া হতো। আমাদের বাড়ীর কৃষক হিসেবে ব্রজমোহন দাস, হরিপদ কুমার দাস এবং সুনীল কৃষ্ণ দাসের নামে ব্যাজ দেবার জন্য তারা টাকা নেয়। ব্যাজ বুকে থাকলে পাক সেনারা ধরবে না বা গুলি করবে না। ৩০শে মে রাত ৮-১৫ মিঃ ক্যাপ্টেনসহ ১৪/১৫ জন খান সেনা আসে। আমাদের ৫ জন করে হাত বেঁধে ২টি দলে ১০ জনকে গাড়ীতে তোলে। আমাদের ৮ জন ছাড়া আর ২ জন ছিল বাপতা গ্রামের অনিল এবং চরফ্যাশনের আর একজন। তারা আমাদেরকে বরিশালে নিয়ে যাবার নাম করে ভোলা খেয়াঘাটে নিয়ে যায়। আমাদের ৫ জনকে ট্রাকে বসিয়ে রেখে অপর ৫ জনকে নদীর কূলে নামিয়ে আমাদের সামনে এক এক করে গুলি করে হত্যা করে। ঐ পাঁচ