পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/২৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՏԳ Ջ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড | ఎసిఫి | মোঃ এমদাদ মিঞা সিকদার থানা- সাতকানিয়া জেলা- চট্টগ্রাম আমি মুক্তি সংগ্রামে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করি। পাক হানাদার বাহিনীর হাতে কিভাবে ধৃত হয়ে গুরুতরভাবে আহত হয়েছিলাম তার সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিম্নে লিপিবদ্ধ করলাম। জনসাধারণকে বিপদ হইতে রক্ষা করাই ছিল আমার মূলমন্ত্র। তাই ২৫ শে মার্চের কাল রাত্রিতে বিভীষিকার মধ্যে শপথ নিলাম সোনার বাংলাকে দস্য কবল থেকে মুক্ত করব। এই দুঃসাহসী কাজে নেমে গেলাম, স্ত্রী, পুত্র, ঘর বাড়ী পরিবার পরিজন ত্যাগ করে। নিজ জীবন বিপন্ন করে স্বাধীনতার সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়লাম। সর্বপ্রথম নিজ ছেলে নাজিমউদ্দিনকে মুক্তিবাহিনীতে ট্রেনিং-এ যাবার জন্য বিদায় দিলাম। সঙ্গে সঙ্গে বাজলিয়া পুরানঘর ইউনিয়নের শতাধিক ছেলেকে অনুপ্রেরণা জুগিয়ে দেশমাতৃকার সংগ্রামে বন্ধুরাষ্ট্র ভারতে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং ক্যাম্পে পাঠাতে লাগলাম। আমার নিঃস্বার্থ কর্মতৎপরতায় মুক্তিযোদ্ধাদের ভূমিকা গ্রহণে এলাকা দালালদের চরম বিপর্যয়ের হাত হতে অনেকটা রক্ষা পেয়েছিল। দেশের এই চরম মুহুর্তে নির্যাতিত লোকজনদের রক্ষা করেই ক্ষান্ত হই নাই। শেষ পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং সমাপনান্তে দেশে এলে তাদের ব্যাপারে আমার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। ধোপাদুড়ীস্থ টি, এম, আলীর গ্রুপ, কমলাছড়ীর সুলতান গ্রুপ ও চিংড়িংমানস্থ জাহেদ গ্রুপের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ স্থাপন করে উক্ত গ্রুপের মুক্তি যোদ্ধাদের রসদপত্র যোগাড় করে তাঁদের সজীব রেখে তাঁদের সক্রিয় সহযোগিতায় সেখান থেকে বান্দরবন, হিলট্র্যাক্ট ও দোহাজারস্থ পাক হানাদার দসু্যদেরকে অতর্কিত আক্রমণ চালিয়ে তাদের প্রাণ বধ করি এবং বান্দরবন রাস্তার অনেকাংশে ব্রীজ নষ্ট করে দিয়ে যাতায়াতের বিঘ্ন সৃষ্টি করি। শেষ পর্যন্ত আমার গোপন ষরযন্ত্রে পাক হানাদার দসু্যগণ অতিষ্ঠ হয়ে বান্দরবন ত্যাগ করে দোহাজারী এসে সমবেত হয়। আমার এই কার্যকলাপে দালালগণ অতিষ্ঠ হয়ে আমাকে ধরিয়ে দেবার গোপন চক্রান্ত চালাতে থাকে। আমি এতে বিন্দুমাত্র বিচলিত হই নাই ও নিজের জীবনের প্রতি লক্ষ্য রাখি নাই এবং দেশমাতৃকার মুক্তি সংগ্রামে বিন্দুমাত্র ত্রটি করি নাই। ২৮/৯/৭১ ইং আনুমানিক ১০ টার সময় জাহেদ গ্রুপসহ চরাত ইউনিয়নের রাজাকারদের উপর আক্রমণ চালিয়ে ফিরবার পথে কুখ্যাত দালালরা ক্যাপ্টেনকে ডেকে এনে আমাকে ধরিয়ে দেয়। বাজালি হাইস্কুলে একদিন একরাত বেঁধে রেখে বাজালিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিদ্দিক আহমদ এম, এ সহ একযোগে নিকটবর্তী দোহাজারী মিলিটারী ক্যাম্পে চালান দেয়। সেখানে আমাকে ৪ দিন অনবরত দৈহিক নির্যাতন চালিয়ে একেবারে অকেজো করে ফেলে। শেষ পর্যন্ত আমি যখন শব্দ করতে অক্ষম তখন আমাকে গুলি করার আদেশ দেওয়া হয়। কিন্তু পরিবারের অনেক কাকুতি মিনতির পর পাঁচ হাজার টাকা প্রদানে ১/১০/৭১ ইং তারিখে আমাকে ফেরত দেওয়া হয়। খোদাতায়ালার অশেষ করুণায় ও সুষ্ঠ চিকিৎসার ফলে কোন রকমে বেঁচে উঠি। বর্তমানে আমি জীবন্মত, চলাফেরা করা কঠিন। আমার সাথে বাজালিয়ার মতিলাল বিশ্বাস ও শিবুরাম সেনও ধরা পড়েন, তাঁদের আমার মত অবস্থা। স্বাক্ষর/ মোঃ এমদাদ মিঞা সিকদার ১৪/৮/৭৩