পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৩০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՏԳ Ֆ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড |ી ૨૨૦ |ી মোঃ গোলাম হোসেন গ্রম-লোহগাড়া, থানা-সাতকানিয়া জেলা- চট্টগ্রাম ইং ৫ জুন, ১৯৭১ রোজ শুক্রবার। তখন ভোর ৬টা। আমি ঘুম থেকে উঠে অজু করে নামাজ শেষ করে আমার বাবার মাজার জিয়ারত করার পর বাড়ীর ভিতর আসি। তখন একদল পাক বাহিনী একটি বাস ও একটি কার নিয়ে আমার বাড়ীর সম্মুখে এসে দাঁড়ায়। তারপর তারা নেমে এসে কয়েকজন আমাদের বাড়ীর উত্তর পাশ দিয়ে ও কয়েকজন বাড়ীর সামনে দিয়ে আমাদের সম্পূর্ণ বাড়িটা ঘেরাও করে। ঐ সময় আমার বড় ভাই জালাল উদ্দিনকে ধরে ফেলে। এবং তাকে বাহির বাড়িতে বেঁধে রেখে কয়েকজন বাড়ীর ভিতর ঢুকে। বাড়ীর বাহির হতে দেয় নাই। পাক দস্য বাহিনী আমাদের বাড়ী হতে পিতলের থালা, গহনা-পত্র সোনা, রূপা, শাড়ীসহ প্রায় দুই লক্ষ টাকার জিনিসপত্র নিয়ে যায়। যাওয়ার সময় আমাকে এবং আমার আর এক ভাই মোঃ আব্দুল বারীকেও নিয়ে যায়। যাওয়ার সময় তারা আমাদের নিকট হতে টাকা দাবী করে। টাকা দিতে অস্বীকার করায় তারা আমাদের দোহাজারী ক্যাম্পে নিয়ে যায়। ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়ার পর আমাদের তিনজনের কাছে ২০ হাজার টাকা দাবী করে আর বলে যে টাকা দিতে না পারলে তোদেরকে কেটে কেটে হত্যা করব। তখন আমি বললাম অত টাকা কোথায় হতে দেব স্যার? এই কথা বলার সাথে সাথে একজন নরপিশাচ আমাদের তার কিছুক্ষন পর আমার আর কয়েক ভাই ঐ সংবাদ পেয়ে আমার মার নিকট হতে ৫ হাজার টাকা নিয়ে দোহাজারী ক্যাম্পে যায়। পাক বাহিনীর দালাল ৫ হাজার টাকা নিয়ে আমাদেরকে ছেড়ে দেবে বলে আমার ভাইদেরকে জানায়। কিন্তু সেই সময় পাক বাহিনীর দালাল ও চেয়ারম্যানের ছেলে এসে আমাদের কাছ হতে ১০ হাজার টাকা দাবী করে। তখন আমার ভাইয়েরা তা-ই স্বীকার করে এবং বলে যে এখন পাঁচ হাজার টাকা নেবেন এবং পরে পাঁচ হাজার টাকা নেবেন। এই চুক্তি করে যখন তারা আমাদের নিকট যাচ্ছিল ক্যাপ্টেন স্বয়ং তখন আমাদের প্রহারে লিপ্ত। তাদের দেখে ক্যাপ্টেন সেই দিকে এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসা করল কি জন্য এসেছ? তখন আমার ভাই রশিদ আহমদআমাদের মুক্তির কথা বলার সাথে সাথে তাকেও প্রহার আরম্ভ করল। পাক বাহিনীর দালাল যখন চুক্তির কথা বলল তখন ক্যাপ্টেনের মেজাজ একটু ঠাণ্ডা হয়ে গেল। তারপর পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে আমাদেরকে মুক্ত করে দিল। তার তিনদিন পর দালাল এসে বাকী পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে যায়। স্বাক্ষর/মোঃ গোলাম হোসেন