পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৩০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৭৭ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড լլ ՋՏ8 լ মোঃ আবুল কাশেম গ্রামঃ কচুয়াই ডাকঘর- চক্রশালা থানা- পটিয়া, জেলা চট্টগ্রাম আমার বোন মোছাম্মৎ আছিয়া বেগম বি. এ. তিনি পূর্ব হইতেই একজন আওয়ামী লীগ কর্মী ছিলেন। জুন মাসের ৬ তারিখে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার সময় তিনজন শান্তি কমিটির লোক ও ইউনিয়ন চেয়ারম্যান এবং ক্যাপ্টেনসহ ১২ জন মিলিটারী আসিয়া আমাকে এবং আমার বোনকে তল্লাশী করে। সেই সময় আমার বোনকে চিনিতে না পারিয়া তাহাকে জিজ্ঞাসা করে আবুল কাশেম ও আছিয়া বেগম কোথায়? তখন আমার বোন অন্য ঘরে পলায়ন করে। তাহার পর পাক বাহিনী প্রতিটি ঘরে ঢুকিয়া প্রতি ঘর হইতেই অন্য মেয়েদের অলঙ্কার ছিনাইয়া লয়। পরে নুরুল আলমকে ধরে। তাহাকে বলে যে আছিয়া ও কাশেমকে বাহির করিয়া দাও নইলে তোমাকে গুলি করা হইবে। কিন্তু আমার ভাই আলম আমাদের কথা না বলাতে তাহাকে বন্দুক দিয়া বেদম প্রহার করে। তাহারা আমার চাচা ডাঃ ইব্রাহিমকে ধরিয়া আমাদের কথা জিজ্ঞাসা করে। আমার চাচা তখন বলিয়াছেন যে ওরা দুইজন আমার মেয়ের বাড়ী বাঁশখালীতে বেড়াইতে গিয়াছে। পাক বাহিনী তাহকে মারপিট করিতে থাকে এবং বলে যে তাহারা কোথাও যায় নাই। তুই লুকাইয়া রাখিয়াছিস। তাহাকে যখন প্রহার করিতে করিতে অজ্ঞান করিয়া ফেলিল তখনো তাহারা তাহাকে মারধর করিতেছিল। এমতাবস্থায় বাড়ীর অন্যান্য সকলে আসিয়া তাহাদেরকে বলিল যে কাশেম ও আছিয়া বেড়াইতে গিয়াছে। তাঁহাকে একা না মারিয়া আমাদের দুঃখ সহ্য করিতে না পারিয়া বাহির হইয়া আসে এবং বলে যে আমি আছিয়া। তখন সবাইকে ছাড়িয়া দেয় এবং তাহাকে জিজ্ঞাসা করে যে তোমার ভাই কাশেম কোথায়? তিনি বলেন যে আমার ভাই কাশেম শহরের দোকানে থাকে, বাড়ীতে আসে নাই। তারপর তাহারা ও তাহার আব্বাকে কমল মুন্সির হাটে লইয়া আসে। সেখানে তাহাকে নানা প্রকার প্রশ্ন করে। বাজারের সকলেই যখন তাহার কথা ভাল বলে তখন পাক বাহিনী তাহাদের দুইজনকেই ছাড়িয়া দেয়। তারপর রাজাকার বাহিনী পুনরায় আমার বাড়ীতে যাইয়া আমার ভাই নুরুল আলমকে মারপিট করে এবং আমার বাড়ীর সিন্ধুক ভাঙ্গিয়া প্রায় দুই হাজার টাকা লইয়া যায়। তৃতীয়বার বাজাকার বাহিনী ও শান্তি কমিটির লোকসহ ১৫/১৬ জন গিয়া বাড়ী ঘেরাও করে। সেদিন তাহারা আমার ফুফুর নিকট হইতে ৫ ভরির অলঙ্কার ও ২৭০টি টাকা এবং আমার নুরুল আলমের নিকট হইতে ২০০টাকা কাড়িয়া লয় ও আমার বোন আছিয়াকে পুনরায় তল্লাশী করে। তারপর তাহারা আমার মামীর নিকট ও ভাবীর নিকট হইতে তিন ভরির অলঙ্কারসহ কিছু টাকা লইয়া যায়। স্বাক্ষর/মোঃ আবুল কাশেম ১৫/৫/৭৩