পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৩০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Տ Գե বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড | ૨રG Iી শ্রী নীরদ বরণ চৌধুরী প্রধান শিক্ষক, আজগর আলী উচ্চ বিদ্যালয় গ্রাম- পশ্চিম শাকপুরা থানা- বোয়ালখালী জেলা- চট্টগ্রাম আমি একজন স্থানীয় উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। বিগত ২০শে এপিল ১৯৭১ইং আমাদের গ্রামে পাক বাহিনী তাদের স্থানীয় দালালদের সহযোগিতায় অগ্নিসংযোগ, নারী ধর্ষণ, লুটতরাজ, গুলিবর্ষণ আরম্ভ করে। ইহাতে আমাদের গ্রামে ৫৪ জন লোক মারা যায়। সেদিন সকালে আমি কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রী লইয়া বসিয়া দেশের এই পরিস্থিতি লইয়া আলাপ আলোচনা করিতেছিলাম। এমন সময় কয়েকজন লোক আসিয়া আমাকে বলিল যে বড়ুয়া পাড়ায় পাক সৈন্য আসিয়া ঘিরিয়া ফেলিয়াছে এবং গুলি করিয়া লোক হত্যা আরম্ভ করিয়াছে। এই কথা শুনিয়া আমি আমার পাড়ার ছেলেমেয়েকে উপদেশ দিলাম যে তোমরা কৃষক সাজিয়া মাঠে নামিয়া পড়। এই ভাবে আমার গ্রামের ছেলেমেয়েরা অন্য গ্রামে যাইতে পারিল। ইতিমধ্যে আমাদের গ্রামের দালালরা পাক বাহিনীকে লইয়া অত্র গ্রামে চলিয়া আসে এবং সমস্ত ঘরবাড়ী অগ্নিসংযোগ করিয়া ভূস্মীভূত করিয়া দেয়। আমাদের গ্রামের অধিকাংশ লোক আসিয়া আমাদের গ্রামে বালিকা বিদ্যালয়ে আশ্রয় লইয়াছিল। সেই নিরাশ্রয় নাম না জানা হতভাগ্য নিহতদের উক্ত সংখ্যার মধ্যে ধরা হয় নাই। আমি তখন আমাদের বাড়ীর সম্মুখে পূর্বদিকে পুকুর পাড়ে দাঁড়াইয়া আশ্রয় প্রাপ্ত ছেলেদের উপদেশ দিতেছিলাম। দালালের ছেলেরা আমাদের লক্ষ্য করিয়াছিল যে আমরা কোথায় লুকাইতেছিলাম। আমরা সকলে এক সংগে এক জায়গায় লুকানো ঠিক হইবে না। তখন আমার কথা মত যে যেখানে পারিল লুকাইয়া পড়িল। আমি ও আমার ভাই চিত্ত আচাৰ্য্য উত্তর দিকে গিয়া ছোট্ট একটি জঙ্গলে আশ্রয় লইলাম। তখন চারিদিকে ভীষণ অগ্নিসংযোগ ও গুলিবর্ষণ করিতেছিল। তখন আমি আমার পরিবারের সংগে যোগাযোগ রক্ষা করিতে পারি নাই। পাক বাহিনী অগ্নিসংযোগ করার পূর্বে আমাদের লুণ্ঠন করে। পাক বাহিনী যখন আমাদের গ্রাম ছাড়িয়া চলিয়া গেল তখন আমরা আবার গ্রামের দিকে চলিয়া আসিলাম। এমন সময় একজন পাক দালাল আসিয়া আবার প্রচার করিল যে পাক বাহিনী আবার এই গ্রামে আসিতেছে। এই কথা শুনিয়া আমরা আবার পালাইতে আরম্ভ করিলাম। এমন সময় দালালের লোকেরা আমাদের বাড়ীর পোড়া টিনগুলি লইয়া গেল। তখন আমরা বুঝিতে পারিলাম যে পাক বাহিনীর কথা বলিয়া আমাদের ধোঁকা দিতেছিল। এই ঘটনার ঠিক চারদিন পর আবার পাক বাহিনী আসিতেছে এই কথা শুনিয়া আমি এবং ভাই চিত্ত আচার্য্য আমার এক মুসলিম ছাত্রের অভিভাবকের বাড়ীতে আশ্রয় লইলাম। কিন্তু অল্পক্ষণেই বুঝিতে পারিলাম যে এখানে নিরাপদ নয়। ওখান হইতে আবার বাড়ীর দিকে চলিয়া আসিলাম এবং পরবর্তী কি কার্যক্রম হইবে তাহা চিন্তা করিতে লাগিলাম। ২০শে এপ্রিল রাত্রি ১২টা। এমন সময় আমাকে একজন কৃষক লোক আসিয়া খবর দিল আমাদের এখানে থাকা নিরাপদ নয়। সেই কৃষক লোককে লইয়া আমরা রাত্রি ১টার সময় বাহির হইলাম। ঘুরিতে ঘুরিতে যখন রাত্রি শেষ হইয়া গেল তখন কৃষক লোকটি আমাদের চরখিজিরপুর গ্রামে এক খামারের মধ্যে রাখিয়া আসিল ঐ খানে থাকিয়া আবার শুনিতে পাইলাম আমাদের বাড়ী (২১এপ্রিল) আবার আক্রমণ করিয়াছে।