পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৩১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ఎఫిరి বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড l &○○ l আফিজা খাতুন গ্রাম- দ: খানে বাড়ী ডাকঘর- শর্শদী বাজার জেলা- নোয়াখালী আমি অতিশয় দরিদ্র পরিবারের অসহায় নারী। বিগত স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় নিজ বাড়ীতে ছিলাম। সংগ্রামের প্রথম দিকে এক গ্রাম হইতে অন্য গ্রামে আত্মীয় পরিজনের বাড়ীতে আত্মগোপন করিয়া ছিলাম। আর্থিক অবস্থাহীন বলিয়া সীমান্ত অতিক্রম করিতে পারি নাই। বৃদ্ধ পিতা সম্পত্তিহীন কৃষক ছিল। অপরের সম্পত্তি চাষ করিয়া ও দৈনিক মজুরী দিয়া অতি কষ্টে দিন যাপন করিত। সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম দিকে পাক বাহিনী দ: খান বাড়ী গ্রামের নিকট অকাতরে রকেট শেলিং করিতেছিল। তখন আমার পিতা জুলু কামাল মিঞা মাঠে জমি চাষ করিতেছিল। অকাতরে রকেট শেলিং করিতে দেখিয়া ভয়ে জ্ঞান হারাইয়াই মাঠে শাহাদৎবরণ করেন। পিতার অকালে মৃত্যুর পর আমার পরিবারে দুঃখের ছাপ নামিয়া আসে। অন্য দিকে ফেনী থানায় পাক বাহিনীর নৃশংস অত্যাচারে অত্যাচারিত হইয়া আমার প্রায় সকল আত্মীয়স্বজন ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে আশ্রয় গ্রহণ করে। আমি অর্থের অভাবে নিজ বাড়ীতে বৃদ্ধ মাতা ও ছোট ভাইকে নিয়া ছিলাম। অক্টোবর মাসে পাক বাহিনী শৰ্শদী বাজারে শিবির স্থাপন করে। পাক বাহিনী, রাজাকার ও দালালরা উক্ত এলাকার গ্রামের পর গ্রাম জ্বালাইয়া দিতে থাকে। অস্থায়ী সম্পত্তি লুটতরাজ করিয়া নিয়া যায়। হঠাৎ আক্রমণের ফলে আমাদের পক্ষে আত্মগোপনের সুযোগ হয় নাই। আমি ভয়ে ঘরের গোলার নীচে পালাইয়া থাকি, কিন্তু রাজাকার ও পাক বাহিনীর পিশাচরা ঘরে ও বাহিরের সকল কিছু তন্ন তন্ন করিয়া পরীক্ষা করে করে এবং এবং আমাকে গোলার নীচ হইতে টানিয়া বাহির করে। পাক নরপশুরা আমাকে দেখিয়া আনন্দে উৎসাহিত হইয়া ওঠে ও রাজাকারকে একটি ১০ টাকার (দশ টাকা) নোট হাতে দিয়া ঘর হইতে বাহির করিয়া দেয়। আমি নরপিশাচ দিগকে দেখিয়া ভয়ে চিৎকার করিতে থাকি, কিন্তু কাহাকেও সাহায্যে আসিতে দেখিলাম না। আমার ভীষণ চিৎকার দেখিয়া তাহারা বেয়নেট বাহির করিলে আমি তাহদের পায়ে জড়াইয়া ধরিলাম এবং বহু বিনয়ের সহিত আমার পিতার মৃত্যুর কথা বলিলাম। আমি আপনাদের বোন, আমার চরিত্রে আপনারা কলঙ্ক লেপন করিবেন না। আমি দরিদ্র মেয়ে। আমার মা বহুবার তাহাদিগকে অনুরোধ করিল। ক্ৰন্দন করিল তোমাদের তো মা, বোন আছে, কিন্তু নরপিশাচরা আমাকে মাকে পায়ে লাথি মারিয়া ঘর হইতে বাহির করিয়া দিল এবং ঘরের দরজা দিয়া ফেলিল। আমার ভীষণ চিৎকার আকুতি মিনুতি তাহদের হৃদয়ে একটুও মায়ার সৃষ্টি করিল না। দুইজন পাক নরপিশাচ আমার উপর নির্মমভাবে অত্যাচার করিল। আর পাশে দেখি আমার অসহায় মা মাথায় পানি দিতেছে। নির্মম অত্যাচারে আমার স্বাস্থ্য খারাপ হইয়া পড়ে। আমার অসুস্থ শরীরের উপর এইভাবে তিন দিন অত্যাচার করে এবং প্রতিদিন আমি জ্ঞান হারাইয়া ফেলি। রাজাকার আমাদের কড়া পাহারা দিতে থাকে। তিন দিন পর একদিন গভীর রাত্রে মা ও ছোট ভাইকে নিয়া বাড়ী হইতে অন্য গ্রামে পলায়ন করি। ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিকে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দেশে ফিরিয়া আসি এবং জানিতে পারি মুক্তিযোদ্ধারা সেই রাজাকার ওসমান আলীকে হত্যা করিয়াছে। টিপসহি/অফিসা খাতুন