পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৩২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৯৪ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড լ ՀՖԳ լ আহছান উল্লাহ গ্রাম- দেয়নাথপুর থানা- রায়পুর জেলা- নোয়াখালী মে মাসের প্রথম সপ্তাহে পাক বাহিনী রায়পুর বিনা মোকাবিলায় দখল করে। বাজারের অনতিদূরে একটি হিন্দু বর্ধিঞ্চ গ্রাম জ্বালাইয়া দেয় ও দুইটি নিরপরাধ ব্যক্তিকে হত্যা করিয়া চলিয়া যায়। কয়েক দিন পর আবার রায়পুর থানায় আসিয়া শিবির স্থাপন করে এবং আরম্ভ হয় নারী নির্যাতন, দৈহিক পীড়ন। পাক বাহিনী স্থানীয় জামাতে ইসলামী ও মুসলিম লীগ সমর্থিত দালালদের সহায়তায় আওয়ামী লীগ কর্মী ও হিন্দুদের বাড়ঘর লুণ্ঠন ও প্রজুলন শুরু করে। রাত্রের অন্ধকারে বাড়ীতে হানা দিয়ে মা বোনদের উপর নৃশংসভাবে অত্যাচার করে। তাহদের অত্যাচারে এই এলাকায় অগণিত মা বোনের সতীত্ব নষ্ট হয়। শেষের দিকে নিরপরাধ লোকদের বাড়ীও তাহারা জুলাইয়া দেয় ও লুণ্ঠন করে। আমি একজন দরিদ্র মিস্ত্রী। সারাদিন পরিশ্রম করিয়া কোন প্রকারে জীবিকা নির্বাহ করিতাম। পাক বাহিনী ও তাহদের দালালরা আমার সুখের সংসারে আগুন জ্বালাইয়া দিয়াছে। পাক বাহিনী রায়পুর শিবির করার পর আমার এখানে থাকা সম্ভব হইল না। আমার কাজ একেবারে বন্ধ হইয়া গেল। বাঁচার অন্বেষণে সুদূর পল্লী গ্রামে চলিয়া গেলাম। সেখানে কাঠ মিস্ত্রীর কাজ করিয়া জীবিকা নির্বাহ করি। মে মাসের শেষ সপ্তাহে পাক বাহিনী ও দালালরা আমাদের গ্রামে দেয়নাথপুর আক্রমণ করে। প্রতিটি বাড়ী খুঁজিয়া যুবকদিগকে হত্যা করে ও মা বোনদের উপর পাশবিক অত্যাচার করে। আমার বাড়ীতে তল্লাশি করিয়া আমাকে না পাইয়া আমার স্ত্রী আরমার নেছা বেগমের উপর অত্যাচার করে। সেই সময় আমার স্ত্রী সাত মাসের গর্ভবতী ছিল। আমাকে বাড়ীতে না পাইয়া মুক্তিফৌজ সন্দেহ করিল। আমার স্ত্রীর উপর নৃশংস অত্যাচার করে। তাহদের অত্যাচারে আমার স্ত্রী আরমান নেছা ঘটনাস্থলেই শাহাদৎ বরণ করে। এইভাবে এই এলাকায় বহু নারীকে অত্যচার করিতে করিতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করিয়া বিদায় নেয়। স্বাক্ষর / - আহছান উল্লাহ