২৯৫ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড l &○br l মো: বাদশা মিয়া গ্রাম- লুধুয়া থানা- রায়পুর জেলা- নোয়াখালী ৫ই রমজান ১৯৭১ইং সালে পাক বাহিনী লক্ষ্মীপুর হইতে আমাদের গ্রামের পার্শ্ববর্তী গ্রাম মীরগঞ্জ আসে। মীরগঞ্জে আসিয়া মীরগঞ্জ প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মসজিদে তাহাদের শিবির স্থাপন করে। এই শিবিরে প্রায় ৩০ জন পাক নরপিশাচ ও ৯০ জন রাজাকার ছিল। একদিন আমি আমাদের গ্রামের পাশে সুপারি বাগানে কাজ করিতেছি। এমন সময় একদল রাজাকার আসিয়া আমাকে ধরিয়া ফেলিল। রাজাকার কমাণ্ডার আমাকে চোখ বাঁধিয়া রাজাকার ক্যাম্পে আনিল। ক্যাম্পে আনিয়া মসজিদের সামনে যে বাঙ্কার ছিল সেই বাঙ্কারের ভিতর হাত, পা বাঁধিয়া রাখিল। রাত্রিতে আমাকে একটা রড দিয়া ভীষণ প্রহার করে এবং রাজাকার কমাণ্ডার বলে বেটা মুক্তিবাহিনীর লোক, বেটাকে এখন মুক্তিবাহিনীর সাধ মিটাইতেছি। আবার সেই রডটা আগুন দিয়া পোড়াইয়া আমার পায়ে ঠাসিয়া ধরিলে আমি অজ্ঞান হইয়া পড়িয়া থাকি। প্রায় ঘণ্টা দেড়েক পর আমার জ্ঞান ফিরিয়া আসে। তারপর রাজাকাররা বলে তুই মুক্তিবাহিনীর লোক, তোকে আমরা আর বাঁচাইয়া রাখিব না। বলি স্যার আমি একজন নিরীহ মানুষ, মুক্তিবাহিনী কে বা কোথায় থাকে তা আমি জানি না। এই কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে আমাকে পাক বাহিনী ভীষণভাবে চপেটাঘাত করে এবং বলে বেটা ঠিক কথা বল না হইলে তোকে আমরা চিরনির্বাসিত করিয়া দিব। এমন সময় একজন পুলিশ আসিল বলিল স্যার এই মুক্তিবাহিনীকে ডাব, নারিকেল দিবে। কাজেই বেটাকে ছাড়িয়া দেওয়া হইবে না। তখন উক্ত পুলিশটি বলিল দেন বেটাকে আমি শেষ করিয়া দিয়া আসি। তখন পুলিশটি আমাকে দূরে আনিয়া বলিল তুমি এক কাজ কর। কাজ হইল এই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পিছনে যে পুল আছে ঐ পুলের নীচে কয়েকজন মরা মানুষ ভাসিতেছে, তুমি একটা বাঁশ আনিয়া মরা মানুষ গুলি ভাসাইয়া দিয়া চলিয়া যাও। তখন আমি পুলিশের কথা মত মরা মানুষ গুলি ভাসাইয়া দিয়া চলিয়া আসি। আজ পর্যন্ত আমার পায়ের সেই দাগ রহিয়াছে। টিপসহি/মো: বাদশা মিয়া
পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৩২২
অবয়ব