পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৩২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՀիշՆ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড l >めh l মো: আবুল কালাম গ্রাম- উত্তর দেনাতপুর থানা- রায়পুর জেলা- নোয়াখালী ভাদ্র মাসে পাক বাহিনী আমাদের রায়পুর থানায় আসিয়া রায়পুর আলিয়া মাদ্রাসায় একটি ক্যাম্প স্থাপন করে। এই মাদ্রাসায় রাজাকার বাহিনীর জন্য একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করে। এখান হইতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হইয়া রাজাকার বাহিনী রায়পুর থানার পার্শ্ববর্তী গ্রামে মুক্তি বাহিনী ও আওয়ামী লীগের কর্মীদের বাড়ীতে যাইয়া লুটপাট আরম্ভ করে। এই ভয়ে তখন হইতে আমি আমাদের বাড়ীতে রাত্রি যাপন করা নিরাপদ নয় বলিয়া অন্য বাড়ীতে রাত্রিযাপন করিতাম। একদিন আমি আমাদের গ্রামের মো: রসিদ পাটোয়ার সাহেবের বাড়ীতে ঘুমাইতেছিলাম। এমন সময় একদল রাজাকার আসিয়া আমাকে ঘুম হইতে ডাকিয়া তুলিল। তখন আমি মনে করিলাম আমার আর বাঁচার কোন পথ নাই। প্রায় ১৫ জন রাজাকার আসিয়াছিল, তার মধ্যে আমার পরিচিত ছিল চারজন। একজন রাজাকার কমাণ্ডার আসিয়া আমার হাত বাঁধিয়া তাহাদের ক্যাম্পে নিয়া আসিল এবং পাক বাহিনীর হাতে অৰ্পন করিল। পাক বাহিনী তখন আমার চোখ বাঁধিয়া একটি অন্ধকার ঘরের মধ্যে রাখিল। প্রথম দিন আমাকে তাহারা বেত দ্বারা বেদম প্রহার করিতে থাকে। পাক বাহিনী আমাকে বলে তোদের মুক্তিবাহিনীর দল কোথায় ঠিক করিয়া বল তোকে আমরা ছাড়িয়া দিব। তখন আমি বলি না, হুজুর, আমি মুক্তিবাহিনীর দল দেখি নাই। এই কথা বলার সঙ্গে পাক বাহিনী তাহার পাদুকা দিয়া আমার বুকের উপর ভীষণভাবে লাথি মারিল, এই লাথি মারার সঙ্গে সঙ্গে অজ্ঞান ইয়া পড়িয়া থাকি। দ্বিতীয় দিনে উক্ত রাজাকার কমাণ্ডার আসিয়া আমাকে তাহার চাকু দিয়া আমার বাম হাতের রগ কাটিয়া ফেলিল। রগ কাটার সঙ্গে সঙ্গে আমি আবার অজ্ঞান হইয়া পড়িয়া থাকি। তৃতীয় দিনে পাক বাহিনী আমাকে তাহদের হেড কোয়ার্টার মাইজদি পঠাইবে এই খবর শুনিয়া একজন রাজাকার আমাকে বলিল এবং আমি তাহাকে বলিলাম ভাই আমি তোমাকে কিছু টাকা দিব তুমি আমাকে মুক্ত করিয়া দাও। এই কথা শুনিয়া সেই রাজাকার আমার বাড়ীতে সংবাদ দিল। আমার বাড়ী হইতে বড় ভাই ১৫ শত টাকা নিয়া আসিল। পঞ্চম দিনে রাজাকার কমাণ্ডার আমার বড় ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এবং দাবী করে আমাকে দুই হাজার টাকা দিতে হইবে, না হইলে আমরা কালামকে মারিয়া ফেলিব। এই কথা শুনিয়া আমার বড় ভাই বাড়ী চলিয়া গেল। এমন সময় রাজাকার কমাণ্ডার আমার নাকের ভিতর সুচ দিয়া ছিদ্র করিয়া সুতা দিয়া আড়ার সঙ্গে বাধিয়া রাখিল। এই কথা শুনিয়া আমার বড় ভাই দুই হাজার টাকা সংগ্ৰহ করিয়া আবার ক্যাম্পে ফিরিয়া আসিল। রাজাকার কমাণ্ডার দেলোয়ার হোসেনকে দুই হাজার টাকা দিয়া আমাকে মুক্ত করিয়া আনিল। স্বাক্ষর / - মো: আবুল কালাম