পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৩৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

LL Q বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড ২৫০ ॥ ডাঃ মোঃ ইদ্রিস মিয়া মেডিক্যাল অফিসার সোনাগাজী পল্লী উন্নয়ন কেন্দ্রঃ বোয়ালখালী, চট্টগ্রাম ১৩ই এপ্রিল চট্টগ্রাম সেনানিবাস হইতে বহু পাক সৈন্য আসিয়া রাঙ্গুনিয়া দখল করে ও রাঙ্গুনিয়া কলেজে শিবির করিয়া থাকে। সেই দিন আমিও প্রথমে ভয়ে রাঙ্গুনিয়া শহর ত্যাগ করিয়া চলিয়া যাই আবার বিকালে হাসপাতালের দিকে আসি। তখন হাসপাতালে কেহই ছিল না। প্রচুর ঔষধ ও বহু জিনিসপত্র ছিল। আমি সেই দিন রাত্রে একাই হাসপাতালে রাত্রি কাটাইলাম। ১৪ই এপ্রিল সকালে শহরের অবস্থা ভালই দেখা গেল। পাক সেনারা তখন কাহারও উপর কোন খারাপ ব্যবহার করিতেছে না দেখিয়া আমার স্ত্রী ও ছেলে মেয়েদিগকে গ্রাম হইতে বাসায় নিয়া আসিলাম। দরজা খুলিতে বাধ্য করে এবং তাহারা বলে যে তোমার বাসা হইতে গুলির আওয়াজ শুনা গিয়াছে। আমার বাসার ভিতর ঢুকিয়া পড়ে এবং আমার হাতের ঘড়িও আমার ভায়রা ভাই এর হাতের ঘড়ি ও ট্রানজিষ্টারটি পাক সৈন্যরা হাতে নিয়া নেয়। আমার বাসায় আমার লাইসেন্সভূক্ত একটি বন্দুক ছিল তাহাও তাহারা ছিনিয়া নেয়। বন্দুকটি লওয়ার পর আমাকে ও আমার ভায়রা ভাইকে দুইজন পাক সৈন্য বাসা হইতে বাহির করিয়া নিয়া গেল। আমাদিগকে পাক নরপশুরা হাত উপরের দিকে উঠাইতে বলিল এবং আমাদিগকে যে গুলি করিয়া হত্যা করিবে তাহা বুঝিতে আর দেরী হইল না। বহু অনুরোধ করিয়া বলিলাম আমরা মুসলমান, কলেমা পাঠ করিলাম ও কোরআনের সুরা পাঠ কথামত পাক নরপশুদিগকে গাড়ীতে উঠাইয়া দিয়া আসিলাম। ১৫ই এপ্রিল পাক বাহিনীর লেঃ সেলিম আমার অফিসে এবং সবসময়ের জন্য হাসপাতাল খোলারাখার নির্দেশ দিল এবং আমার উপর কোন জুলুম হইবে না বলিয়া আশ্বাস দিল। এদিকে মুক্তিবাহিনীর আক্রমণ দিন দিন বৃদ্ধি পাইতে থাকে। আহত মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা আসিয়া এখানে চিকিৎসা করিত এবং সপ্তাহে ২/৩ বার সেন্টার পরিদর্শের নামে বনের ভিতরে মুক্তিবাহিনীর শিবিরে আহত মুক্তিযোদ্ধা ভাইদের চিকিৎসা করিতাম এবং প্রয়োজন মোতাবেক ঔষধপত্র মুক্তিবাহিনীর শিবিরে পাঠাইতাম। আমার সহিত পত্র যোগযোগ হইত রাঙ্গুনিয়ার মুক্তিবাহিনীর কমাণ্ডার চেয়ারম্যান নজীর আহমদের। এভাবে স্বাধীনতা সংগ্রাম চলার সহিত আমার ও সংগ্রাম চলিতে থাকে। ১৭ই অক্টোবর রাত্রে তারাবির নামাজ পড়া অবস্থায় মসজিদের ভিঃতরে আমাকে গ্রেফতার করা হয়। আমাকে লেৎ সেলিমের শিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়। পরের দিন আমী মার্শাল ল’ কোটে ক্যাপ্টেন ইসহাক পারভেজ এর নিকটে হাজির করা হয়। বিচারে হাজিরের পূর্বে কোর্টের সম্মুখে একজন সুবেদার আমাকে বেদম প্রহার করে এবং ভারতের দালাল বলিয়া ক্যাপ্টেন ইসহাকের নিকট হাজির করে। সেখানে লেঃ হইতে ঔষধ পাঠায়। সেই সময় চেয়ারম্যান নজীর আহমদের লিখিত একখানা পত্র বাহির করিয়া ক্যাপ্টেন ইসহাক পারভেজের নিকট পেশ করে এবং বলে