পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৩৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ΦΣ Ψ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড ી ૨(tbr | আব্দুস সোবাহান সার্কেল অফিসার (উন্নয়ন) শ্রীমঙ্গল, সিলেট ডাক বাংলায় থাকা অবস্থায় আমাকে নানা রকম প্রশ্ন করা হয়। আমি প্রাণভয়ে সব প্রশ্নের উত্তরে কিছুই জানি না উত্তর দিতে থাকি। এতে আমার উপর অত্যাচার শুরু হয়। চড়, লাথি এবং ডাণ্ড পিটা হয়; কিন্তু আমার কাছ থেকে কিছু না পাওয়ায় আমাকে ওয়েলফেয়ার বিল্ডিংয়ে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানে দেখতে পাই পাক জান্তারা বাঙ্গালীদের চক্রীর সাথে বেঁধে চক্র ঘুরিয়ে বেত দিতে থাকে। রাইফেলের অগ্রভাগ দিয়ে গুতো মারতে থাকে। রাত্রে কোথায় নিয়ে যায় এবং গুলি করে মারা শব্দ শোনা যায়। পরে জেনেছি শ্রী মঙ্গলস্থ সাধু বাবার থলি নামক স্থানে গণহত্যা করা হতো। বুট দিয়ে মানুষকে লাথি দেওয়া হতো। জুলন্ত সিগারেট দিয়ে শরীরে ফোস্কা তোলা হতো। এই রকম অত্যাচারের প্রক্রিয়া দেখে আমি প্রাণভয়ে আল্লাহর কাছে প্রাণভিক্ষা করতে থাকি। কারণ এ ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না। এমতাবস্থায় ১২মে ১৯৭১ সন পর্যন্ত থাকি এবং আমাকে নানাবিধ প্রশ্ন করা হয়। তন্মধ্যে একটা প্রশ্ন ছিল “ তুমলোগ কা মেজর কর্ণেল ক্যাপ্টন কিদর হ্যায়?” আমি বলতাম আমি জানি না (অবশ্য উর্দুতে উত্তর দিতাম)। তারপর যখন আমি অসহ্য হয়ে যাই তখন আমি বললাম, হাম সরকারী দপ্তর তথা ইউনিয়ন কাউন্সিল কা মেকানিক হ্যায়, হাম কভি মুক্তি মে নেহি খা ইছলিয়ে হাম কোছ নেহি জান্তা হয়।” এটা শোনার পর ক্যাপ্টেন তারেক আমাকে আমার উপরস্থ কর্মচারীর সার্টিফিকেট দাখিল করতে পারবে কি না জিজ্ঞাসা করলে আমি বল্লাম পারব। তখন আমাকে ২জন সিপাহী দিয়ে সি, ও (রেভ) যিনি তখন সিও (ডেভ)- এর দায়িত্ব পালন করতেন তার কাছে পাঠায় এবং তার কাছ থেকে সার্টিফিকেট আনলে ১৪ইমে ১৯৭১ইং তারিখে আমাকে পুনরায় কাজে যোগদান করব বলে স্বীকারনামা লিখিয়ে নিয়ে ছাড়ে এবং পরে হেটে হেটে ১০ মাইল দুরে রাজঘাট ইউনিয়নে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। আমি প্ৰাণ ভয়ে পায়ে হেঁটে রাজঘাট পৌছি। কিন্তু রাজঘাট গিয়ে আমার নিস্তার হয় নি। কারণ আমাকে শ্রীমঙ্গল থেকে কোন রিলিজ সার্টিফিকেট দেওয়া হয়নি। তাই আবার সিন্দুরখান ক্যাম্পে আটক করা সেখানে শ্রীমঙ্গলের সাথে যোগাযোগ করার পর আমাকে ছাড়ে। সেখানে যাওয়ার পর দেখলাম কোথা হতে বাঙালী লোক এনে বাসবাড়ী নামক স্থানে গুলি করে হত্যা করে এবং মানুষকে বেঁধে ডাণ্ডা দিয়ে পিটাতে থাকে। এই সমস্ত অত্যাচারের মধ্যে যেটা আমার কাছে চিরস্মরনীয় হয়ে থাকবে তা হচ্ছে নিম্নরূপঃ আমি রিলিজ হওয়ার ২ মাস পরে অর্থাৎ ১৯৭১ সনের জুন মাসের শেষ দিকে রাজঘাট থেকে শ্রীমঙ্গল যাচ্ছিলাম। আমি ক্যাপ্টেন মুতালিব সাহেবের জীপে যাচ্ছিলাম এবং তার ড্রাইভার আমার সাথে ছিল। আমরা কুনদড়া বাগানে যাওয়ার পথে দেখলাম কুনদড়া বাগানের পতিবরের উত্তরের পুলের উপরে কয়েকজন মিলিটারী এবং এই মিলিটারীরা একজন শ্রমিককে একটি গাড়ির পিছনে বেঁধেপ্রায় ৩০ মাইল বেগে গাড়ি চালাচ্ছে। এই অবস্থা দেখে আমরা ভীত হয়ে পড়ি এবং আর শ্রীমঙ্গল যাওয়ার চিন্তা ত্যাগ করি। লোকটিকে গাড়ির পিছনে বেঁধে টানায় তার শরীরের সমস্ত চামড়া উঠে যায়। এই অবস্থা দেখে আমরা আবার রাজঘাট ফিরে চলে আসি। অবশ্য শেষে শুনেছি লোকটা বেঁচেছে। লোকটাকে এভাবে অত্যাচারের কারণ পরে জেনেছি। পূর্ব রাত্রে মুক্তিবাহিনী কুলাউড়া পুল ভাঙ্গাং এ অত্যাচার তাকে করা হয়েছে। কারণ সে কুলাউড়া বাগানের প্রধান নেতৃস্থানীয় শ্রমিক।