পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৩৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○So বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড মানসে নিয়া বাহির হইল। উপর হইতে আমরা নজর করিয়া দিখিলাম যে, তাহার হাত রশি দ্বারা বাঁধিয়া আগে- পিছে সৈনিক তাহাকে খালের পাড়ে নিল এবং গুলি করিয়া তাহাকে খতম করিয়া তাহারা ফেরত চলিয়া আসিল। এমনিভাবে প্রতিদিন ২-১জনের মৃত্যু দেখিয়াছিলাম। ক্যাম্পের মধ্যে তাজা কুকুরে ভৰ্ত্তি ছিল। এই অসংখ্য কুকুর খালের পাড়ে মানুষের তাজা রক্ত খাইয়া দিনে বেশ মোটা- তাজা হইত। আর সৈনিকরা মানুষের সাথে কুকুরও গুলি করিয়া হত্যা করিত। দুই- এক দিন ফাঁক দিয়াই তাহারা ঐ জল্লাদ খানায় নিয়া আবার নির্যাতন করিত। এমনিভাবে বিভিন্ন উপায়ে আমাকে শারীরিক অত্যাচার আজ চির রোগা করিয়া দিয়াছে। মারের চোটে শরীর হইতে রক্ত ছিটিয়া পড়িত। ক্ষণে ক্ষণে বেহুশ হইলেও তাহারা রেহাই দিত না। তিন/চার দিন তাহারা আমাকে দিয়া লিখিত জবানবন্দি নিয়াছে। ২-৩দিন কথিত লেফটেন্যান্ট আতাহারের সাক্ষাৎ পাইয়াছি। তাহাকে সাহস করিয়া আমার মুক্তির কথা জিজ্ঞাসা করিলে ব্যঙ্গ হাসি হাসিয়া বলিত, “সবুর কর, কুই তকলিফ তো নেহি দ্যা রাহা’। একদিন রাত্র অনুমান ৯টার সময় দুজন বন্দুকধারী সৈনিক আসিয়া বিশেষ করিয়া আমাকে খুব শাসাইতে লাগিল। আমি নাকি মুক্তিবাহিনীর পৃষ্ঠপোষক ও কয়েকজন অবাঙালী লোককে হত্যার ব্যাপারে অঙ্গাঙ্গিভাবে নির্যাতন চালাইয়া একেবারে অচল করিয়া ফেলে। কর্তব্যরত সৈনিক আমার প্রতি খানিক সদয় থাকাতে আমাকে আবার আমার রুমে আনিয়া রাখিয়া যায়। আমাকে মারিয়া ফেলিবে এই ভাবিয়া আমার সঙ্গী ৮-১০ জন কয়েদি আমি ফিরিয়া দেখি তাহারা কাঁদিতেছে আর কলেমা পড়িতেছে ও দুরুদ পাঠ করিতেছে। আমাকে ফেরত পাইয়া তাহারা অনেকটা শান্তি লাভ করে। তাহারা হানাদারদের কথা বলিত না, আমার মাধ্যমেই তাহদের হানাদারদের সাথে কথোপকথন হইত। যেহেতু আমি নিদোর্ষ ছিলাম, কর্ণেল ফখরুল আলম আমাকে ডাকিয়া অনেক শাসাইল। কয়েক দফা গালি দিয়া আমাকে মুক্তির আদেশ দিল এবং কাজে যোগ দিবার জন্য একজন সুবেদার মেজরকে হাওলা করিয়া আমাকে ষ্টেশনে পাঠাইয়া দিলে কোন মতে আমি নয় দিন থাকিয়া স্বাস্থ্যগত কারণে ছুটি লইয়া শ্রীমঙ্গল হইতে কাটিয়া পড়ি। পাক বাহিনীর হাতে আমি মোট ২১দিন বন্দি ছিলাম। স্বাক্ষর/সামসুদ্দিন আহমদ Ֆ Գ. Ֆo. ԳՎ)