পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৩৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○○○ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড ી ૨૭૪ |ી মোছাঃ চানুভান গ্রাম-ফুলবাড়িয়া জেলা- কুমিল্লা আমি দরিদ্র পিতৃহীন অবিবাহিতা নারী। বিধবা মাতা একমাত্র সংসারের আপন পরিজন। আমার কোন ভাইবোন নাই। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন আরম্ভ হইলে পাক বাহিনী পত্তন ইউনিয়নে শিবির স্থাপন করে। জুন মাসের শেষের দিকে পাক সৈন্য ও রাজাকারদের অত্যাচার ও নৃশংসতা বৃদ্ধি পায়। স্থানীয় রাজাকাররা গ্রামের ও ইউনিয়নের বহু ধনসম্পত্তি লুণ্ঠন করে। জুলাই মাসের ১৭ তারিখ বানু মিঞা, সোনা মিঞা ও চীন মিঞা গভীর রাত্রে আমার নিজ বাড়ী হইতে ধরিয়া লইয়া পাক বাহিনীর শিবিরে নিয়া যায়। আমাকে দেখিয়া পাক বাহিনীরা আনন্দে নাচিয়া ওঠে, আমার ক্ৰন্দন তাহদের প্রাণে একটুও মায়ার সঞ্চার করে নাই। রাজাকাররা ধরিয়া নিবার সময় তাহদের নিকট বহু আকুতি-মিনতি ও পায়ে পাঁচ দিন পাক নরপিশাচরা আমাকে তাহাদের শিবিরে ও বাঙ্কারে আটকাইয়া রাখে ও আমার দূর্বল দেহের উপর অমানুষিক অত্যাচার করে ও মুক্তিবাহিনীর সংবাদ জানি কি না জিজ্ঞাসা করে। আমি মুক্তিবাহিনীর সম্বন্ধে জানি না বলিলে আমার উপর ক্রুদ্ধ হইয়া প্রহার করে। এই পাঁচ দিন তাহারা আমাকে গোসল করিতে পর্যন্ত দেয় নাই। আমাকে ধরিয়া দিবার পরিবর্তে রাজাকারগণ পাক নরপিশাচদের হইতে প্রচুর মদ ও গ্রামে গ্রামে ফিরিয়া পাইলেও দেখি ও অনুভব করি আমার দুৰ্ব্বল শরীরে অত্যাচার করিতেছে। সেই কথা ভাবিতে আজও আমার ভয় হয়। আমাকে ১৭ই জুলাই গভীর রাত্রে রাজাকাররা ধরিয়া নিবার পর ১৮ই জুলাই আমার মা নিবার করুন সংবাদ বলিলে উক্ত মুক্তিবাহিনীর কমাণ্ডার ২১শে জুলাই গভীর রাত্রে বহু মুক্তিযোদ্ধা নিয়া ফুলবাড়িয়া পাক সৈন্যদের শিবির ও বাঙ্কার আক্রমণ করেন। হঠাৎ আক্রমণে পাক বাহিনী ও রাজাকাররা আত্মসপৰ্মণ করে। আক্রমণের সময় তাহারা সকলে আমার উপর অত্যাচার করিতেছিল। মুক্তিযোদ্ধা ভাইরা আমাকেসহ ১৪জন পাক সৈন্য ও তিনজন রাজাকারকে গ্রেপ্তার করিয়া ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে নিয়া যান। তাহারা আমার সম্মুখে রাজাকার ও পাক নরপিশাচদের জীবন্ত মাটি চাপা দেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমি ত্রিপুরা রাজ্য হইতে নিজ জন্মভূমি ফুলবাড়িয়া ফিরিয়া আসি। স্বাক্ষর/মোছাঃ চানুভান