পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৩৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩২৫ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড গণহত্যা ও নির্যাতনের বিবরণ বাংলাদেশের দৈনিক পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী শিরোনাম সূত্র তারিখ ঢাকায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গণহত্যার “বাংলাদেশের গণহত্যা’ বাংলার | ........ ১৯৭২ অভিযানের ওপর একটি প্রত্যক্ষদশীর বিবরণ বাণী, বিশেষ সংখ্যা ২৫শে রাত থেকে ২৭ শে রাত -নাজিমুদ্দীন মানিক পচিশে মার্চ উনিশ শ একাত্তর। রাত সাড়ে ১১টা কি পৌনে ১২টা । বাকী দু'টো লেখা শেষ করতে হবে। তাড়াহুড়ো করে হোটেল থেকে চারটে খেয়ে বেড়িয়েছি মাত্র- অবজারভার হাউসের সামনে রাস্তায়। দেখলাম অসংখ্য মানুষের ছুটাছুটি-কেউবা ইট টানছেন, কেউ বা বিরাট বিরাট গাছ কেটে আনছেনকেউ বা পাশের মোটর মেরামত কারখানার সামনে ফেলে রাখা পুরনো ভাঙ্গা গাড়িগুলো এনে রাস্তায় জড়ো করছেন- সবারই মুখে এক কথা - ব্যারিকেড তৈরি করো, ওদের চলার পথে বাধা সৃষ্টি করো, ওদের আসতে দেবো না আমাদের এ জনপদে। মনে পড়লো বসুবন্ধুর নির্দেশঃ আমি হুকুম দেবার নাও পারি, রাস্তা-ঘাট যা কিছু আছে তোমরা সব বন্ধ করে দেবে। এ নির্দেশ অমান্য করতে পারিনি আমি নিজেও- ওদের সাথে ধরাধরি করে সবে ডিআইটি রাস্তার মুখে রেখেছি একটি গাছ। এমনিই শোনা গেল গুলির শব্দ। রাস্তার মানুষগুলো কোন মতে আত্মরক্ষা করলো। আমি দৌড়ে চলে এলাম আমাদের পূর্বদেশ অফিসে। থমকে দাঁড়িয়েছে- দৈনিক পাকিস্তান (বর্তমানে দৈনিক বাংলা) অফিসের সামনে, কনভয়ের সামনে বিরাট ব্যারিকেড। ওরা ডিঙ্গাতে পারছিল না। তখন – তাই গুলী খাওয়া শুয়োরের মত ঘোঁৎ ঘোঁৎ করছে কনভয়ের বিরাট গাড়ীগুলো। আর গাড়ীর আরোহী পাষণ্ডরা গুলি ছুড়ছে ওদের চার পাশে। হায়দার ভাইয়ের ধমক খেয়ে কামরার ভেতর চলে এলাম। জানালা দিয়ে স্পষ্টতঃ দেখতে পেলাম গাড়ী থেকে নামলো দশ-বারোজন হার্মাদ। অনেক কষ্টে ব্যারিকেড সরিয়ে পথ করে নিলো ওদের কনভয়ের। তারপর টয়েনবি সার্কলার রোড ধরে চলে গেলো। টেলিফোন করলাম বেগম বদরুন্নেসা আহমদের বাড়ীতে। কেউ ধরলো না। তারপর আর কাউকে টেলিফোন করতে পারিনি। হার্মাদরা টেলিফোন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিলো। অফিসের সর্বত্র এক বিক্ষুব্ধ নীরবতা আর শহরের সর্বত্র অবিরাম বোমাবর্ষণ, ফিল্ডগান, মেশিনগান, ষ্টেন, এস এল আর, আর চাইনিজ অটােমেটিকের একটানা শব্দ। মাঝে মাঝে কানে ভেসে আসছে গুলী খাওয়া মুমূর্যু নরনারীর করুণ আর্তনাদ। হায়দার ভাই, সেলিম ভাই, লোহানী ভাই, রফিক, অহিদ, এরশাদ, আতিক, কোন কথা নেই। বোমার এক ঘন্টা শব্দ শুনছি- আর যেনো মনে হচ্ছে নিজের হৃৎপিণ্ডটাকে চিবিয়ে খাচ্ছি। অথচ আমরা তখন অসহায়- করার কারো কিছু নেই তখন। মনে পড়লো সেদিন সন্ধ্যার কথা। রাত ৮টার দিকে শেখ সাহেব ব্রীফ করেছিলেন দেশী সাংবাদিকদের এর আগে চাটগাঁ, রংপুর, খুলনা, রাজশাহীতে জল্লাদের হামলার খবরে গর্জে উঠেছিলেন বঙ্গশাৰ্দ্দল। এক বিবৃতি দিলেন তিনি। বললেন বাংলায় আগুন জুলছে। এ আগুন নেভানোর সাধ্য কারো নেই। আমার মানুষকে