পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

〉S বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড গণহত্যা ও নির্যাতনের বিবরণঃ বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় গৃহীত সাক্ষাৎকার ॥ ঢাকা বিভাগ ॥ শিরোনাম সূত্র তারিখ ২। গণহত্যা ও নির্যাতনের বিবরণ বাংলা একাডেমী দলিলপত্র Տ5 ԳՀ-Գ8 ll S \l শ্ৰীমতী বাসন্তী রাণী গুহঠাকুরতা স্বামী ড. জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা প্রধান শিক্ষয়িত্রী, মনিজা রহমান গার্লস হাইস্কুল, গেণ্ডারিয়া, ঢাকা-৪ ১৯৭১ সনের ২৫শে মার্চ সেই কালরাতে আমরা স্বাভাবিকভাবে প্রতিদিনের মত খাওয়া-দাওয়া শেষ করে সবাই রাত নয়টার সময় রেডিও খুলে বসে ছিলাম। ঢাকা রেডিও থেকে আমরা সে রাতে দুর্যোগের কোন পূর্বাভাস পাই নাই। ভয়েস অব আমেরিকা-এর সংবাদ শুনে আমার স্বামী ড. জোতির্ময় গুহঠাকুরতা মেয়ে ‘মেঘনার ঘরে গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এম, এ, প্রিলিমিনারী এবং অনার্স পরীক্ষার্থীদের খাতা দেখতে বসলেন। অকস্মাৎ জনতার দুপদাপ শব্দ শুনে আমার স্বামী এবং আমি দেওয়ালের বাইরে গিয়ে দেখলাম, বিপদ বুঝতে পেরে আমাদের ফ্ল্যাটের প্রবেশপথ তালাবদ্ধ করেন। আমার স্বামী রাস্তার দিকে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করে ভারাক্রান্ত মনে “বিপদ আরম্ভ হয়ে গেল” বলে আবার মেয়ের কক্ষে গিয়ে খাতা দেখতে বসে গেলেন। আমি আজেবাজে চিন্তা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। রাত বারটার দিকে অদূরে বোমার আওয়াজ শুনে জেগে উঠে দেখলাম, ইকবাল হল এবং রোকেয়া হলের দিক থেকে বোমার আওয়াজ ভেসে আসছে। আস্তে আস্তে অসংখ্য লাইট বোমা আকাশকে আলোকিত করে দিচ্ছে, আলোর ফুলকিতে দেখলাম বোমা ও গুলি বর্ষিত হচ্ছে। আমরা দু’জন গুলি ও বোমার কানফাটা আওয়াজ সহ্য করতে না পেরে খাটের তলায় বেড কভার বিছিয়ে নিরাপদে শুয়ে থেকে বর্বর পাক সেনাদের বীভৎসতার তাণ্ডব শুনছিলাম। পাশের কামরা থেকে আমাদের ঝিকে ডাকতে গেলে সে আসে না-আমরা সবাই গুলির অবিরাম গর্জনে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছিলাম। আমাদের ফ্ল্যাটটি কাঁপছিল-চারিদিকে দেখলাম লাইট বোমের আলোর ঝলকানি হিস্ হিস শব্দ শুনে আমার গায়ের লোম শিউরে উঠলো-আমি উঠে গিয়ে জানালা দিয়ে উকি মেরে দেখলাম-আমার এক পাঞ্জাবী মেজর আমার গেটের লোহার জিঞ্জির হাত দিয়ে সজোরে ছিড়ে ফেলে দিয়ে ফ্ল্যাটে প্রবেশ করে আমার মেয়ে মেঘনা'র কক্ষের জানালার মসকুইটো নেট বেয়নেট দিয়ে ছিড়ে ফেলে মাথা ঢুকিয়ে আমাকে দেখে এক দৌড় দিয়ে ঘুরে রান্নাঘরের দরজা ভেঙ্গে আমাদের ফ্ল্যাটে প্রবেশ করে। আমি আমার স্বামীকে