পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৪০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՖԳՆ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড পাক বাহিনীর জিঞ্জিরা আক্রমণ দৈনিক বাংলা ৩ এপ্রিল, ১৯৭২ জিঞ্জিরায় নারকীয় তাণ্ডব মোঃ সাইফুল ইসলাম ২রা এপ্রিল উনিশশো একাত্তর সাল। একটি প্রভাত। কেরানীগঞ্জের একটি রক্তাক্ত প্রভাত। মাত্র কয়েক ঘন্টায় মধ্যেই পৃথিবীর ইতিহাসের ঘৃণ্যতম পশুদের আক্রমণে করে গেলো শত শত প্ৰাণ: লুণ্ঠত হলো কেরানীগঞ্জ, ছাই হয়ে গেলো গ্রমের পর গ্রামের পাস গ্রাম। ধর্ষিতা হলো কেরানীগঞ্জের অনেক মা বোন। রক্তের বন্যা বয়ে গেলো প্রতিটি গ্রামে। সৃষ্টি হলো রক্ত নদী সে নদী মিশে গেলো বাংলার রক্ত সমুদ্রে। ২৫শে মার্চের কালো রাত্রিতে পাক বর্বর বাহিনী যখন আক্রমণ চালায় ঢাকা নগরীতে, যখন নরপশুরা হাহাকার আর্তনাদ আর করুণ চীৎকার প্রতিধ্বনিত হয় নদীর দক্ষিণ পারে তখন কেরানীগঞ্জবাসী শুধু আশ্চর্য ও বিমূঢ়ই হয়নি, প্রতিবাদ তুলেছিলো, দলে দলে এসে জমায়েত হয়েছিলো নদীর এপারে গভীর রাতের নিস্তব্ধতাকে ভঙ্গ করে। ২৫শে মার্চের কালো রাত্রি পেরিয়ে ভোর হলো। সগরবাসীরা প্রাণভয়ে নগরী ছেড়ে কেরানীগঞ্জের গ্রামে এসে ভীড় করতে লাগলো। প্রত্যেকের মুখে মলিনতার ছাপ স্বজন হারানোর। গন্তব্যস্থল ঠিক নেই সম্পূর্ণ অচেনা গ্রাম, শুধু জানটুকু সম্বল, টাকা পয়সা জিনিসপত্র কিছুই নেই সাথে। শুধু একটু ঠাই, একটু বাঁচার প্রচেষ্টা। ২৬শে মার্চের পরে পরপর কয়েকটি দিনে নগরীর প্রায় সমস্ত লোক বুড়িগঙ্গা পেরিয়ে চলে এলো এই কেরানীগঞ্জে। যে যেভাবেই পেরেছে ছুটে এসেছে। প্রায় প্রত্যেকেই স্বজন বিচ্ছিন্ন। আবালবৃদ্ধবনিতা প্রত্যেকেই চলে এলেন কেরানীগঞ্জে। আর কেরানীগঞ্জবাসী? সেবায় এলো কেরানীগঞ্জের প্রত্যেকে। শহরের মাতাকে করে নিল মাতা, পিতাকে পিতা, ভাইকে ভাই, বোনকে বোন। নগরীর প্রত্যেককে বুকে করে নিল কেরানীগঞ্জ। কারো অসুবিধে নেই, সব এক। অবশেষে নেমে এলো কেরানীগঞ্জের বিভীষিকাময় সেই সকালটি। পৃথিবীর ঘৃণ্যতম পশুরা শহর থেকে দৃষ্টি ফেরালো। বক্র দৃষ্টি। সে দৃষ্টি কেরানীগঞ্জে। ইতিমধ্যে শহরের অনেকেই ভয়াতুর মনে চলে গেছে শহরে নিজ নিজ আবাসস্থানে। ছলছল দৃষ্টি নিয়ে বিদায় নিয়েছে তারা। ২রা এপ্রিলের আগের রাতে কেরানীগঞ্জের অনেক স্থানে শোনা গেলো এক চাপা কণ্ঠস্বর-মিলিটারী আসতে পারে। অবশেষে ভোর হলো। কেরানীগঞ্জবাসী তখন ঘুমে অচেতন। সহসা শোনা গেলো কামান আর মটারের শব্দ। অনেকে লাফিয়ে উঠলো ঘুম থেকে। যে যেখানে পারলো ছুটাছুটি করতে লাগলো। শুরু হলো নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চারিদিকে কেবল চীৎকার শুধু প্রাণ বাঁচানোর আকুল প্রচেষ্টা। পশুরা রাত্রিভর প্রস্তুতি নিয়েছিল। কেরানীগঞ্জকে ঘিরে রেখেছিলো। ক্ষেতের মধ্যে নালা কেটে যখন তারা প্রস্তুতি নেয় কেরানীগঞ্জবাসী তখন ঘুমে অচেতন। ঝোপ, ঝাড়, পুকুর, ঘরের ছাদ যে যেখানে পারলো সবাই আত্মগোপন করলো। কিন্তু খুনী টিক্কার