পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৪০৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○brs বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড সমস্ত চেষ্টা ব্যর্থ হলে খান সেনারা তাঁর বাড়ী তল্লাশী করে। কিন্তু বেগম জিয়াক সেখান না পেয়ে হতোদ্যম হয়ে ফিরে যায়। যাবার আগে জানিয়ে যায়, সত্যি কথা না বললে আপনাকে ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে যাওয়া হবে। এরপরই জনাব হক বুঝতে পারেন সর্বক্ষণ তাঁকে অনুসরণ করা হচ্ছে। যেখানেই যান সেখানেই তাঁর পেছনে লেগে থাকে কেউ। এই অবস্থায় তিনি মায়ের অসুখের নাম করে ছুটি নেন অফিস থেকে এবং সপরিবারে ঢাকা ছেড়ে যাবার ব্যবস্থা করতে থাকেন। ব্যবস্থা অনুযায়ী ১লা জুলাই গাড়ী গ্যারেজে রেখে পেছন দরজা দিয়ে বেরিয়ে তাঁরা দুটি অটোরিকশায় গিয়ে ওঠেন। উদ্দেশ্য ছিল ধানমণ্ডিতে বেগম জিয়ার মামার বাসায় গিয়ে আপাতত: ওঠা। কিন্তু সায়েন্স ল্যাবরেটরী পর্যন্ত আসতেই তাদের অটোরিকশা বিকল হয়ে যায়। এই অবস্থায় তাঁরা কাছেই গ্রীনরোডে এক বন্ধুর বাসায় গিয়ে ওঠেন। কিন্তু এখানে তাঁদের জন্যে অপেক্ষা করছিল এক বিরাট বিস্ময়। জনাব হক এখানে গিয়ে উঠতেই তাঁর এই বিশিষ্ট বন্ধুর স্ত্রী তাঁকে জানান যে, কর্নেল জিয়ার লেখা চিঠি তাঁদের হাতে এসেছে। চিঠিটা জনাব হককেই লেখা এবং এটি তাঁর কাছে পাঠাবার জন্যে কয়েকদিন ধরেই তাঁকে খোঁজ করা হচ্ছে। তাঁর কাছে লেখা কর্নেল জিয়ার চিঠি এ বাড়ীতে কেমন করে এলো তা বুঝতে না পেরে তিনি যারপর নাই বিস্মিত হন এবং চিঠিটা দেখতে চান। তাঁর বন্ধুর ছেলে চিঠিটা বের করে দেখায়। এটি সত্যই কর্নেল দিয়েই একটি জিওলজিক্যাল সার্ভের জনাব মুজিবর রহমানের কাছে পাঠান। এদিকে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসায় জনাব হক তাঁর এই বন্ধুর বাসায় রাতের মত আশ্রয় চান। তাঁদেরকে আরো নিরাপদ স্থানে রাখার আশ্বাস দিয়ে রাতে তাঁদেরকে পাঠানো হয় সূত্রাপুরের একটি ছোট্ট বাড়ীতে। তাঁর বন্ধুর ছেলেই তাঁদেরকে গাড়ীতে করে এই বাড়ীতে নিয়ে আসে। এখানে ছোট্ট একটি ঘরে তাঁরা আশ্রয় করে নেন। কিন্তু পরদিনই তাঁরা দেখতে পেলেন পাক-বাহননীর লোকেরা বাড়ীটি ঘিরে ফেলেছে। জনা দশেক সশস্ত্র জওয়ান বাড়ীটার সামনে দাঁড়িয়ে। এই দলের প্রধান ছিল ক্যাপ্টেন সাজ্জাদ আর ক্যাপ্টেন আরিফ। তারা ভেতরে ঢুকে কর্নেল জিয়া ও বেগম জিয়া সম্পর্কে তাঁদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। জনাব হক ও তাঁর স্ত্রী জিয়ার সাথে তাদের সম্পর্কের কথা অস্বীকার করে যান। কিন্তু ক্যাপ্টেন সাজ্জাদ জনাব ও বেগম হকের সাথে তোলা বেগম জিয়ার একটি গ্রুপ ছবি বের করে দেখালে তাঁরা জিয়ার সাথে সম্পর্কের কথা স্বীকার করেন। তবে তাঁরা জানান কর্নেল ও বেগম জিয়া কোথায় আছেন তা তাঁরা জানেন না। এই পর্যায়ে বিকেল পাঁচটার দিকে জনাব হক ও তাঁর স্ত্রীকে সামরিক বাহিনীর একটি গাড়ীতে তুলে মালিবাগের মোড়ে আনা হয় এবং এখানে মৌচাক মার্কেটের সামনে তাঁদেরকে সন্ধ্যে পর্যন্ত গাড়ীতে বসিয়ে রাখা হয়। এখানেই তাদেরকে জানান হয় যে বেগম জিয়াকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরপর তাদেরকে দ্বিতীয় রাজধানী এলাকা ঘুরিয়ে আবার সূত্রাপুরের বাসায় এনে ছেড়ে দেয়া হয়। এখান থেকে রাতে তারা গ্রীনরোডে জনাব হকের বন্ধুর বাসায় আসেন এবং সেখান থেকে ফিরে আসেন খিলগাঁয়ে তার নিজের বাসায়। উল্লেখযোগ্য যে এই দিনই জনার এস কে আব্দুল্লাহর সিদ্ধেশ্বরীর বাসা থেকে বেগম জিয়া ও জনাব আব্দল্লাহকে এবং একই সাথে জনাব মুজিবর রহমানকেও পাক-বাহিনী গ্রেফতার করে এবং ৫ই জুলাই গ্রেফতার করে ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে যায়।