পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৪২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

55 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড কংকালের মিছিল এখানে দৈনিক সংবাদ סי য়ারা, ১৯৭২ নরপশু পাকসেনাদের ধ্বংসযজ্ঞের আর এক অধ্যায়: কংকালে মিছিল এখানে বাংলাদেশের প্রতিটি গৃহাঙ্গন যেন এক একটি বধ্যভূমি। প্রতিটি ভিটা এক একটি শহীদ মিনার। পল্লীর শ্যামল দিগন্ত তাই বেদনায় মলিন। বিস্তৃত মাঠের মাটি ঘাসে লেগে আছে শহীদের রক্ত। নরসিংদী শহরের অদূরে নরসিংদী তারাবো রাস্তার খাটারা পুলটিও হানাদার জল্লাদদের একটি বধ্যভূমি। নরপিশাচরা এই সেতুটিকে পরিণত করেছিল নির্যাতন কেন্দ্রে ও বধ্যভূমিতে। হায়েনার দল পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে তরুণ, তরুণী, ছেলে, বুড়ো নির্বিচারে সকলকে ধরে নিয়ে আসতো এখানে। ওদের উপর চলতো নির্যাতন। নির্যাতনের পর্ব চুকলে তাদের হত্যা করে লাশগুলো পুলের আশেপাশে মাটিচাপা দিয়ে রাখা হতো। হত্যালীলার নীরব সাক্ষী এই পুলের চারিদিকে বহু নর কঙ্কাল ও মাথার খুলি আজও ছড়িয়ে আছে। ব্যাপক অনুসন্ধানে পাক বাহিনীর নিষ্ঠুরতম নির্যাতান ও পাইকারী নরহত্যার অনেক মর্মন্তদ কাহিনী আশেপাশের পতিত জমি থেকে বহু নরকঙ্কাল উদ্ধার করেছেন। এসব নর কঙ্কালের মধ্যে একটি কঙ্কাল জনৈক মহিলার বলে অনুমান করা হচ্ছে। কঙ্কালগুলোর আশেপাশে পাওয়া পোশাক পরিচ্ছদ ছাড়া অন্য কিছু দ্বারা হতভাগ্য ব্যক্তিকে সনাক্ত করা সম্ভব নয়। তেমনি অনুমানের ভিত্তিতে ঐ কঙ্কালটি কোন যুবতীর বলে ধারণা হচ্ছে। কারণ কঙ্কালটির হাতে কাঁচের চুড়ি রয়েছে। আরো একটি কঙ্কাল সনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে সেখানে। এই কঙ্কালটি শিবপুর থানার করার চর গ্রামের জনৈক ব্যক্তির। পোশাক-পরিচ্ছেদ দেখে আরো দুটি কঙ্কাল সনাক্ত করা হয়েছে। সম্ভব কঙ্কাল দুটি নরসিংদী মহাবিদ্যালয়ের নিখোঁজ দুজন হিন্দু অধ্যাপকের বলে উদ্ধারকারীরা ধারণা করেছেন। তাঁত বস্ত্রের জন্য সমধিক প্রসিদ্ধ সেখের চরের জনৈক সমাজকর্মী আমাদের প্রতিনিধিকে জানান যে, বিভিন্ন এলাকা থেকে যুবতীদের ধরে এনে হানাদার পাক সেনারা নরসিংদী টেলিফোন একচেঞ্জে নিজেদের পাশবিক প্রবৃত্তি চরিতার্থ করতো। যারা নরপশুদের কাছে আত্মসর্পণ করতো না তাদের হত্যা করা হতো। তারপর সেই মৃতদেহের উপর পাশবিক প্রবৃত্তি চরিতার্থ করে লাশগুলো ফেলে দেওয়া হতো। এই একচেঞ্জেই নরপশুরা ক্যাম্প খুলেছিল। এখান থেকেই নরপশুরা দালালদের সাহায্যে রাতে গ্রামে হানা দিয়ে বাঙ্গালী নর-নারীদের ধরে আনতো। তারপর তারদর উপর চালাতো বর্বর অত্যাচার। নির্যাতন শেষে তাদের এই খাটারা পুলের কাছে এনে হত্যা করতো। পাঁচদোলাপুল ও খাটারাপুল ছাড়াও আরো কয়েকটি বধ্যভূমি রয়েছে নরসিংদীতে। সেগুলো হচ্ছে পুটিয়া পুল, সানখোলা পুল, খাসির দিয়া রায়পুরা থানার হাটু ভাংগা, বাদুয়ার চর রেলপুল। এসব বধ্যভূমিতে কত বাঙ্গালী লাঞ্চিতা, ধর্ষিতা, মা-বোনের বিদেহী আত্মা আজো হাহাকার করে ফিরছে তার হিসেব কেউই দিতে পারবে না। ংলার মানুষদের হত্যা করে, তাদের বসতবাটি জুলিয়ে, সম্পত্তি লুট করে কৃষককের গবাদি পশু জবাই করে, মাঠের ফসল বিনষ্ট করেই এসব নরপশুরা ক্ষান্ত হয়নি, তাদের ধ্বংসযজ্ঞ থেকে রক্ষা পায়নি শিক্ষা ও ধর্মীয়