পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৪২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ER বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড গ্রামে গ্রামে পথে পথে বধ্যভূমি পূর্বদেশ ৪ ফেব্রুয়ারী, ১৯৭২ গ্রামে গ্রামে পথে পথে বধ্যভূমি পূর্বদেশ রিপোর্ট ॥ বরিশাল, পটুয়াখালী, আশুগঞ্জ কুষ্টিয়া এবং চট্টগ্রামের দামপাড়ায় সম্প্রতি বেশ কটি বধ্যভূমি আবিষ্কৃত হয়েছে। এ সব বধ্যভূমিতে হানাদার ইয়াহিয়ার সৈন্যরা গত ২৫শে মার্চ থেকে শুরু করে গত ন’মাস ধরে কয়েক লাখ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করেছে। বরিশাল, পটুয়াখালী অঞ্চলে কয়েকটি এলাকায় পাক হানাদার বাহিনী কয়েক লক্ষ লোক হত্যা করেছে। এ অঞ্চলে এখনো অনেক স্থানে নরকঙ্কাল ও মানুষের হাড় পড়ে আছে। বরিশালে হানাদার বাহিনী সুপরিকল্পিত উপায়ে এই নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালায়। ওরা বরিশাল শহরে কোন ঘর-বাড়ী ধ্বংস না করে প্রমাণ করবার চেষ্টা করে যে, বরিশালে তারা কোন গণহত্যা বা ধ্বংস চালায়নি। কিন্তু শহর থেকে একটু গ্রামের দিকে এগুলোই দেখা যাবে পশু বাহিনীর হিটলারী কার্যকলাপের চিহ্ন। বরিশাল শহরে কীর্তন খোলার তীরে অবস্থিত ওয়াপদা কলোনী এলাকায় এবং সি, এস, ডি, গোডাউন এলাকায় ও ষ্টেডিয়ামের নিকেটে পশু পাক বাহিনী বাঙ্গালীদের হত্যা করতো। এই সকল এলাকায় নদীর তীরে এখনও মানুষের মাথার খুলি এবং হাড় দেখতে পাওয়া যায় । বরিশাল মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রাবাসের কতিপয় ছাত্র বদর বাহিনীর সদস্য ছিল। ঐ সকল বদর সদস্যরা বহু বাঙ্গালীকে ধরে নিয়ে হত্যা করে। বাংলাদেশের দক্ষিণ অঞ্চলে ঝালকাঠি একটা প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র। ঝালকাঠি বন্দরে পশু বাহিনী পেট্রোলের সাহায্যে আগুন ধরিয়ে সব ঘরগুলো পুড়িয়ে দেয়। এই বন্দরে কমপক্ষে বিশ কোটি টাকার সম্পত্তি ধ্বংস করা হয়। ঝালকাঠির অদূরে আটঘর, কুরিয়ানার পেয়ারা বাগানে মুক্তি যোদ্ধারা সুদৃঢ় প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল। এই পেয়ারা বাগানের পেয়ারা সমগ্র বাংলাদেশে সরবরাহ হয়ে থাকে। এই বাগান এলাকায় একদিনেই পশু বাহিনী কয়েক হাজার লোককে হত্যা করে। এর ভিতর ষোল বছরের যুবক থেকে চল্লিশ বছরের লোকের সংখ্যাই ছিল বেশী। পাক বাহিনী এই পেয়ারা বাগান কেটে পরিষ্কার করার জন্য পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে হাজার হাজার লোককে বলপূর্বক ধরে আনে এবং তাদেরকে দিয়ে পেয়ারা বাগান কেটে পরিষ্কার করাতে থাকে। নিরীহ গ্রামবাসী গাছ কাটতে অস্বীকার করলে তাদেরকে নির্দয়ভাবে হত্যা করা হয়। এই এলাকায় দালাল ব্যতীত অন্য কোন নিরীহ বাঙ্গালীর পক্ষে টিকে থাকা দুরুহ ব্যাপার। কউখালি, বরিশালের আর একটি প্রধান বন্দর। এই বন্দর হানাদাররা সম্পূর্ণভাবে জুলিয়ে দেয় ও গ্রামের গ্রামে ঢুকে নিরীহ বাঙ্গালীদের হত্যা করে। পিরোজপুর মহকুমা শহরে নদীর তীরে যে স্থানে বাঙ্গালীদের দাঁড় করিয়ে হত্যা করা হতো সেই জায়গায় পিরোজপুর হানাদার বাহিনী কর্তৃক দখলকৃত হওয়ার পর সেখানে যত যুবক ছিল সবাইকে হত্যা করা হয়। রাজাপুর বানরি পাড়া মঠবাড়িয়া স্বরুপকাঠি এবং অন্যান্য এলাকায় হানাদার বাহিনী শান্তি কমিটির সহযোগিতায় বিপুলসংখ্যক বাঙ্গালীকে হত্যা করে। পটুয়াখালী শহরেই কয়েক হাজার বাঙ্গালীকে হত্যা করা হয়। পটুয়াখালী জেলার অন্যান্য এলাকায় যে সংখ্যক নিরীহ লোকদের হত্যা করা হয় তার প্রকৃত তথ্য উদঘাটিত হলে মোট হত্যার সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পেতে পারে।