পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৪২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

860 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড রাহ আজ শশান ংবাদ ৫ ফেব্রুয়ারী, ১৯৭২ রথযাত্রা উপলক্ষে আর ভীড় জমবে না এখানে ধামরাই আজ শাশান বাংলাদেশের একটি স্থান নাম ধামরাই। নামটাকে কন্দ্রে করে প্রচলিত আছে অনেক কিংবদন্তি। অনেক ভক্ত প্রাণ এই নামটিকে স্মরণ করে ভাবাবেগে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। এখানকার প্রাচিন কীর্তি ধামরাইয়ের পথ। বাংলাদেশের এত বড় রথ আর কোথাও ছিল না। শোনা যায় এই রথটাকে টানতে প্রায় একশত মণ রথযাত্রার সময় ধনাঢ্য ব্যাক্তিরা এ পাট দান করতেন। রথযাত্রা উপলক্ষে বসতো মেলা। ভক্তজনেরা এসে ভীড় জমাতো এই ধামরাইয়ে । অসংখ্য সাধু সন্ন্যাসীর পদধুলিতে পবিত্র হয়ে উঠতো ধামরাইয়ে পথ ঘাট। গত এপ্রিলের প্রথম দিকে এই ধামরাইয়ে প্রবেশ করলো পাক-ফৌজের একটি দল। লুট করলো মন্দিরের সোনাদানা টাকা-পয়সা ও মূল্যবান আসবাবপত্র। বাংলার এই বিখ্যাত রথটাকে লাগালো আগুন। কয়েকদিন ধরে পুড়ে পুড়ে ছাই হয়ে গেল রথটি। পাক সেনারা রথটি পুড়িয়েই ক্ষান্ত হলো না । এর স্মৃতি বাঙ্গালীর মন থেকে মুছে ফেলবার জন্য ছাই ও কয়লাগুলো ট্রাকে বোঝাই করে নিয়ে গেল। বাংলাদেশ থেকে চিরদিনের জন্য নিশ্চিহ্ন করে দিল একটা ঐতিহ্যকে। ভক্তজনের কলগুঞ্জনে ধামরাই আর জেগে উঠবে না সহসা । ভাক্ত রথীরা আর আসবে না এখানে। রথটিও কোনদিন নতুন করে গড়ে উঠবে না। ধামরাই কালের বুকে জেগে থাকবে ধ্বংসের ইতিহাস হয়ে পাক হানাদার এ ঐতিহাসিক রথটিকে নিশ্চিহ্ন করে থেমে যায়নি। এখানকার বহু লোককে গ্রেফতার করেছে। নির্যাতন করেছে। হত্যা করেছে। পাক হানাদারদের সাথে জুটেছিল বাংলার কতিপয় ঘৃণ্য নরপিশাচ। তারাই পথ দেখিয়ে নিয়ে যেতো হানাদারদের। এখানেও পথ দেখিয়েছিল কতিপয় এদেশী মোহাম্মাদী বেগ। ধামরাইয়ে নিহত হতভাগ্য বাঙ্গালীদের মধ্যে প্রথমেই মনে পড়ে ধামরাই স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষক দীনেশ বাবুর কথা। বার্নিয়ার রোগী ছিলেন দীনেশ বাবু। তার স্ত্রী মস্তিষ্ক বিকৃত। তার তিনটা ছেলে। তৃতীয় ছেলে হাবুল জগন্নাথ কলেজের বাণিজ্য বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। বাবার সঙ্গেই বাড়ীতে ছিল গোলযোগের সময়। ৯ই এপ্রিল বেলা ১২টা। তিনি রান্না করছিলেন। এর ফাঁকে উঠতে হলো তাকে। কারণ প্রাণের ভয়ে পালাচ্ছে লোক। বেলা ১২টার মধ্যে ৩/৪ বার দৌড়ালেন আবার ফিরে এলেন। অদৃষ্টে যা আছে তা খণ্ডাবে কে? পাক বাহিনী রাস্তা কেমন করে চিনবে বা তাঁকে খুঁজে বের করতে পারবে? কিন্তু ঘরের শক্রবিভীষণ। ংলার মাটিতে ছিল অসংখ্য মীরজাফর আর জগত শেঠ। এই মীরজাফর, জগতশেঠের বংশধরদেরই একজন ধীনেশ বাবুকে সনাক্ত করে দিল । দীনেশ বাবু ধরা পড়লেন। ছেলে হাবুল বাড়ীতেই। তার সঙ্গে ৪/৫ হাজার টাকা। হাবুল ভেবেছিল হয়ত টাকা পেলেই বাবাকে ছেড়ে দিবে। তাই এগিয়ে গিয়েছিল দালালদের হাতে পায়ে ধরে বাবাকে ছাড়তে। তাই বুঝি কাল এসেছিল। তাকেও রেখে গেল না বর্বর ডাল কুত্তার দল। তাকে থানায় রেখে দেয় একরাত । দীনেশ বাবু এবং তার ছেলে হাবুল এর উপর অকথ্য নির্যাতন চালানো হয় এতেও দণ্ড শেষ হলো না দুটি নিষ্পাপ প্রানের। দীনেশ বাবার দিন শেষ প্রায়। হাবুলের জীবনের যাত্রা