পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৪২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪০২ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড হাজীগঞ্জে খান সেনাদের হত্যাযজ্ঞের স্বাক্ষর ংবাদ ৫ ফেব্রুয়ারী, ১৯৭২ হাজীগঞ্জে বর্বর খানসেনাদের হত্যাযজ্ঞের অসংখ্য স্বাক্ষর প্রতিদিনই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে কুমিল্লা, ৩ রা ফেব্রুয়ারী। এ জেলার প্রসিদ্ধ ব্যবসা কেন্দ্র হাজীগঞ্জ ও এর পাশ্ববর্তী এলাকা হতে প্রতিদিন বর্বর পাক বাহিনীর হাতে নিহত মানুষের হাড়, মাথার খুলি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিদিনই উৎঘাটিত তিনশ’ মাথার খুলি এবং মানুষের হাড় বিচ্ছিন্নভাবে পড়ে থাকতে দেখা যায়। বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার একজন প্রতিনিধি জানাচ্ছেন যে, বর্বর হানাদাররা এ অঞ্চলে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে এলাকাকে কেমন করে ধ্বংস করেছে তার অনেক কাহিনী এখন পাওয়া যাচ্ছে। স্থানীয় হামিদা জুট মিলকে বর্বর পাক পশুরা ৩ হাজার বাঙ্গালী নিধনের বধ্যভূমিতে রুপান্তরিত করেছিল। মিলের পার্শ্ববর্তী কোন স্থানে অবস্থানরত সেকেন্দার আলী সংবাদ সংস্থার প্রতিনিধিকে জানান যে, প্রতিদিন পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে বাঙ্গালী যুবকদেরকে এখানে ধরে এনে সারা রাত পাক পশুরা নির্যাতন চালাত। তারপর তাদের কয়েকজনের হাত, পা একসাথে বেঁধে মৃত বা অর্ধমৃতাবস্থায় ডাকতিয়া নদীতে ফেলে দিত। হাজীগঞ্জ থানা প্রধান জনাব হাতেম আলী, একজন প্রত্যক্ষদশী আবদুস সোবহান এবং ৭৫ বৎসর বয়স্ক একজন প্রতিনিধিকে আরো অনেক চাঞ্চল্যকর কাহিনীর কথা জানান। হাজীগঞ্জ থানায় লুটপাট অগ্নিসংযোগ এবং নারী নির্যাতনের কাহিনীর অন্ত নেই। একমাত্র বারকুল গ্রামেই বর্বর বাহিনী এবং তাদের চাইয়েরা ১২০ জন আবালবৃদ্ধবনিতাকে খুন করেছে। অনেক বালিকাকে পাশবিক অত্যাচার করেছে এবং দালালদের সহযোগিতায় ৪ঠা মে গ্রামটিকে সম্পূর্ন ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। এ থানায় এমন কোন গ্রাম নেই বললে চলে, যেখানে অগ্নিসংযোগ, লুট এবং নারী নির্যাতন করা হয়নি। প্রত্যক্ষদশীর বিবরণে প্রকাশ, মুজাফফরগঞ্জই বর্বরতা চরম রুপ নিয়েছিল। এখানে এক বাড়ীতে ২ জন রাজাকার একটি বালিকাকে ধর্ষণে প্রবৃত্ত হলে বাড়ীর অন্যান্য লোক তাতে বাধা দেয়। পরদিন একদল রাজাকার এবং দখলদার বাহিনীর লোকজন সেই বাড়ী আক্রমণ করে ৩৭ জন লোককে হত্যা করে। শুধু এতেই নিবৃত্ত ছিল না ডাল কুত্তার দল, সেই বাড়ীর ৪টি বালিকাকে ধরে নিয়ে ধর্ষণ করতে থাকে এবং ৩/৪ দিন পর তাদের মৃতদেহ পাশের একটি খালে ভাসতে দেখা যায়।