পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৪৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8の○ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড শিরোনাম সূত্র তারিখ স্বাধীনতা এলো, দানবীর আর, পি, সাহা আজও দৈনিক আজাদ ৫ ফেব্রুয়ারী, ১৯৭২ এলেন না গাড়ীর শব্দ শুনলেই মনে আয়-’এই বাবু আইতাছে’ স্বাধীনতা এলো, দানবীর আর পি সাহা আজও এলেন না জেঠামণি না আসলে আমার কান্না পাবে, আমি এখানে থাকতে পারব না।” কথা কটি বললো ভারতেশ্বরী হোমসের কিণ্ডার গার্টেন দ্বিতীয় মানের ছাত্র রোকেয়া ইসলাম। বলতে বলতে কেঁদে ফেললো ৮ বৎসরের মেয়ে রোকেয়া ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে। বাঁধ ভাংগা বন্যার মত তার অশ্রু ঝরছে। এ দৃশ্য বড় বেদনাদায়ক। এ দৃশ্য বড় মর্মান্তিক। অথচ কিছুক্ষণ পূর্বেও রোকেয়া তার সহগামী বোনদের সাথে মাঠে ছুটাছুটি করছিল। ৭১-এর মে মাসে পাক বাহিনী হোমসের ছাত্রীদের প্রিয় জেঠামণি আর তার ছেলে ভবানী প্রসাদ সাহাকে ধরে নিয়ে যায়। অভিযোগ ’ওরা হিন্দু। ভারতের চর। আওয়ামী লীগের সমর্থক”। কিন্তু হোমসের ছাত্রীরা উচ্চকণ্ঠে বলেছে” সব মিথ্যে সব মিথ্যে।” তিনি আমাদের আদর করেন। কান্না পেলে চোখের জল মুছিয়ে দেন। সত্যিই অসাধারণ ব্যক্তিত্বের অধিকারী দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা একটি মহিরুহ। এ মহিরুহের ছায়াতলে বিগত ৩০ বৎসর যাবত অসংখ্য ছাত্রী জ্ঞানের আলোকে উদ্দীপ্ত হয়েছে। আর পি সাহা হোমসের ছাত্রীদের ভালবাসতেন গভীরভাবে। তাদের শাসনও করতেন কঠোরভাবে। আবার পরক্ষণেই মাথায় হাত বুলোতেন সস্নেহে। সকল দু:খ, সকল বেদনা অসুখ বিসুখ ভুলে যেতেন এখানে এসেই। হোমসের ছোট ছোট মেয়েরাই ছিল তার কর্মজীবনের সঞ্জীবনী শক্তি তার কর্মবহুল জীবনের প্রেরণা। আর এদের দিকে তাকিয়েই তিনি কাজ করতেন দিনরাত অনবরত। এদের মুখে হাসি দেখলে তিনি খুশি হতেন, পুলকিত হতেন। কুসুমের মতই ছিল তার মন, কোমল আর বজের মতই ছিল কঠোর তার বাহিরের রুপ। হোমসের প্রতিষ্ঠাতা দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা স্বাধীনতার পর আজ অবধি নিখোঁজ। তবে এ অন্তর্ধান সম্পর্কে কোন সঠিক তথ্যই উদঘাটিত হয়নি। হোমসের ছাত্রী শিক্ষয়িত্রী কুমুদিনি হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স রোগী কুমুদিনি জনকল্যাণ ট্রাষ্টের কর্মচারী সহ তার বন্ধুবান্দব শুভানুধ্যায়ী সবিশেষ উদ্বিগ্ন। জেঠামণি ফিরে আসবেন। বাবু ফিরে আসবেন। আমাদের বিশ্বাস তিনি আজও বেছে আছেন। এ মহামানবের মৃত্যু হতে পারে না । তিনি তো মানবতাবাদী, সমাজবাদী। তার কোন শক্রথাকতে পারে না।” এ দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে সবাই অধীর আগ্রহে প্রহর গুনছে। এ প্রতীক্ষা তাদের যেন আর শেষ হতে চাচ্ছে না। গভীর উৎকণ্ঠা আর প্রতিক্ষায় তাদের দিন কাটছে। হোমসের প্রিন্সিপাল মিসেস প্রভা মুৎসুদি বল্লেন, আপনারা চেষ্টা করে দেখুন, কোন না কোন ভাবে কাকা বাবুকে ফিরিয়ে আনা যায় কিনা। সালমা রহমান বললেন এখান থেকে বিগত দিনগুলোতে শত শত ছাত্রী জ্ঞানের আলোক নিয়ে মানবতার মশাল নিয়ে